স্বামীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় আয়শা খানম
নেত্রকোনা শহরের কাটলি এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে স্বামী গোলাম মুর্তজার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানম (৭৪)।
আজ শনিবার বাদ আসর স্থানীয় অন্বেষা স্কুলমাঠে জানাজার আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আয়শা খানমকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। মরদেহ ঢেকে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকা দিয়ে। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এর আগে বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে মরদেহ নেত্রকোনা শহরের কাটলি এলাকার নিজ বাসায় এসে পৌঁছায়। তখন সেখানে স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে বেদনাঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
প্রগতিশীল আন্দোলনের এক বাতিঘর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সহসভাপতি, মানবতাবাদী, নির্লোভ ও সহজ-সরল মনের মানুষ ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানম। তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন।
আজ ভোরে ঢাকার নিজ বাসভবনে অসুস্থ হয়ে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। নেত্রকোনায় জানাজা শেষে স্বামী গোলাম মুর্তজার কবরের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়।
আয়শা খানম একমাত্র মেয়ে উর্মি খানমসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আয়শা খানম ১৯৪৭ সালে ১৮ অক্টোবর নেত্রকোনা সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতী গ্রামে ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেত্রকোনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক ও ময়মনসিংহের মমিনুন্নিসা মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ছাত্রজীবন থেকে নারী নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন আয়শা খানম। তিনি সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়শা খানম ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সব সময় সামনের সারিতে ছিলেন। আগরতলায় গিয়ে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবাও দিয়েছেন আয়শা খানম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আয়শা খানমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান শেফালী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়র রহমান খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার রায়, পৌর মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান, আয়শা খানমের ভাগ্নে সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য আরিফ খান জয়, প্রতিরোধ যোদ্ধা অসিত সরকার সজল, ভাগ্নে ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর খান মিঠু, তাঁর ছোট ভাই নেত্রকোনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম খান পাঠান বিমল, ভাগ্নে টিম ফুটবল বিজিএমসির ক্যাপ্টেন অমিত খান শুভ্র, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক ফুটবলার মাসুদ খান জনি, কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি কমরেড স্বপন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কমরেড নলীনি কান্ত সরকার, জেলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি রেহেনা সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম এ্যানি, জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি ভজন দাস, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান জনি, জেলা উদীচী সংসদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সভাপতি অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ্ এমরান, নবনাট্য সংঘ জেলা শাখার সভাপতি সালাহ উদ্দিন খান রুবেল, জেলা যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তপথী শর্মা, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি পার্থ প্রতীম সরকার, সাধারণ সম্পাদক তানভীর প্রমুখ।