স্বামীকে ৬ টুকরো : ফাতেমা পাঁচ দিনের রিমান্ডে
রাজধানীর বনানীতে স্বামীকে হত্যার পর ছয় টুকরো করার মামলায় গ্রেপ্তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এই আদেশ দেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী শরীফুল ইসলাম আসামি ফাতেমা খাতুনকে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ফাতেমা খাতুন লোকের বাড়িতে কাজ করে টাকা জমাতেন। সেই টাকা অনৈতিক কাজে ব্যয় করতেন স্বামী ময়না মিয়া। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো বলে জানিয়েছেন ফাতেমা। এর মাঝে ফাতেমা জানতে পারেন, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তারপর থেকে ফাতেমা স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বামীকে হত্যা করেন ফাতেমা।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনানীর আমতলী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটা নীল রঙের ড্রামের মধ্যে ময়না মিয়ার মাথাবিহীন দেহ উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ। একই রাতে ১১টার পর মহাখালী বাস টার্মিনালের এনা কাউন্টারের কাছে একটা ব্যাগের মধ্যে উরু থেকে খণ্ডিত দুইটি পা এবং কাঁধ থেকে খণ্ডিত দুইটি হাতের অংশ উদ্ধার করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ।
হারুন অর রশীদ বলেন, নিহত ময়না মিয়া বনানীর কড়াইল এলাকায় তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমার সঙ্গে কয়েকদিন ধরে বসবাস করছিলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ বনানী থানাধীন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির কোম্পানির অফিস থেকে আসামি ফাতেমা খাতুনকে গতকাল সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। পুরো ঘটনা ফাতেমা আক্তার আমাদের কাছে স্বীকারও করেছেন।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘প্রথমে নিহত ময়নার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর স্বামীর খোঁজ না পাওয়ার বিষয়টি জানা যায়। একপর্যায়ে জানা যায়, ভিকটিম কড়াইল এলাকায় প্রথম স্ত্রী ফাতেমার সঙ্গে কয়েকদিন ধরে থাকছিলেন। তদন্তের ধারাবাহিকতায় ফাতেমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ফাতেমা পুরো বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ফাতেমা আমাদের বলেছেন, গত ২৩ মে থেকে স্বামী ময়না মিয়া তার বাসায় অবস্থান করেন। পারিবারিক কলহ, টাকা-পয়সা বণ্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে স্বামীর সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার জমানো টাকা ময়না মিয়া নিয়ে অনৈতিক কাজে খরচ করতেন।’
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ঘটনার পরিকল্পনা মোতাবেক কড়াইল এলাকা থেকে ফাতেমা দুই পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে শুক্রবার রাতে জুসের সঙ্গে স্বামীকে খাইয়ে দেন। সারা রাত ও পরের সারা দিন তার স্বামী ঘুমে অচেতন থাকার পর সন্ধ্যার দিকে কিছুটা সম্বিত ফিরে পেয়ে স্ত্রীকে বকাবকি করে মারধর করতে গিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েন। এ সময় ময়না মিয়া ‘পানি পানি’ বলে আর্তনাদ করলে ফাতেমা ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস আবার তার মুখে ঢেলে দেন। একপর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে স্বামীর দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখেন এবং তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেন। এরপর তার বুকের ওপর বসে বাসায় থাকা নতুন ধারালো স্টিলের চাকু দিয়ে স্বামীর গলা কাটা শুরু করেন।
মশিউর রহমান বলেন, একপর্যায়ে ফাতেমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে ময়না মিয়া নিজের হাত মুক্ত করে ফাতেমার হাতে খামচি এবং কামড় বসিয়ে দেন। এতে ফাতেমার রাগ আরও বেড়ে যায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ময়না মিয়া ও ফাতেমা দুজনেই খাট থেকে পড়ে গেলে ফাতেমা ময়নার বুকের ওপর উঠে তার গলার বাকি অংশ কেটে ফেলেন। এভাবে রাত অতিবাহিত হলে সকালবেলা ফাতেমা লাশ গুম করার জন্য ধারালো চাকু দিয়ে ময়না মিয়ার হাতের চামড়া ও মাংস কাটেন এবং ধারালো দা দিয়ে হাড় কেটে খণ্ডিত অংশকে তিনটি ভাগ করেন। যাতে ধরা না পড়েন, সেজন্য মরদেহ ছয় খণ্ড করে তিন ভাগে ভাগ করে প্রথমে দেহ আমতলীতে এবং হাত-পা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে ফেলে দেন। পরে বাসায় এসে মাথার ব্যাগটি নিয়ে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের নিচে গুলশান লেকে ফেলে দেন। কেউ সন্দেহ করবে না এবং গ্রেপ্তার হবেন না ভেবে বাসায় এসে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে থাকেন ফাতেমা।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফাতেমা একাই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। তবে বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখব। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তাও জানার চেষ্টা করব আমরা। আমরা খুব দ্রুততম সময়ে এ মামলার চার্জশিট দিতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।’