স্বাধীনতা দিবসে আসবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তিন লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৬ জন। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা দুই লাখ ১০ হাজারের বেশি নয়। আগামী ২৬ মার্চ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয় সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই তালিকা প্রকাশ করার কথা জানান মন্ত্রী।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নামের তালিকা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হলো। এই তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (molwa.gov.bd) পাওয়া যাবে।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। তালিকার প্রাথমিক খসড়া আজ প্রকাশ করছি। আগামী ২৬ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। বর্তমান তথ্যমতে, কোনো কোনো তালিকায় অর্ন্তভুক্তির সংখ্যা তিন লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৬ জন। এদের মধ্যে দাবিদার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৫১ হাজার ২৮৫ জন। বর্তমানে ভাতা পান এমন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ এক হাজার ৪৬১ জন। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা দুই লাখ ১০ হাজারের বেশি নয়।’
মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে গরমিলের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম একাধিকবার রয়েছে। আমরা যাচাই-বাচাই করতে গিয়ে দেখেছি- একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম ১২ জায়গাতেও রয়েছে। আমরা এখন এগুলো পরিচ্ছন্ন করে একটি নির্ভূল তালিকা জাতিকে উপহার দিবো।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ২০০৩ সালে তালিকার বাইরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। ওই সময় থেকে ব্যাপকহারে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম নতুন করে তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৬ হাজার নতুন করে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতা চলতেই থাকে। আমাদের সময়ও এটা হয়। এখন আমরা এসব যাচাই-বাচাই করছি।’
রাজাকারের তালিকার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা রাজাকার হিসেবে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়ে পাকিস্তানি আর্মির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন, তাঁদের তালিকা এটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই তালিকা সংরক্ষিত ছিল, সেখান থেকে আমরা সংগ্রহ করেছি। আজ থেকে এটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।’ এ তালিকার রাজাকাররা কে কোন দলে আছেন, এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
এর বাইরেও রাজাকারদের নাম প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় যে পুরোনো ১৯ জেলা ছিল, সেসব জেলা সদরে আমরা চিঠি দিয়েছি। সেখানে কোনো রেকর্ড অথবা গেজেট যদি থাকে, সেগুলোও পাঠাতে বলা হয়েছে। সেগুলো যাচাই করে আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে আমরা প্রকাশ করব।’
এক সঙ্গে কেন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হলো না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এর আগেই ওই জেলাগুলোকে তাগাদা দিয়েছিলাম। কিন্তু সাড়া পাইনি।’
এই তালিকা অনুযায়ী রাজাকারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটা সামাজিক সচেতনতা ও জনগণকে অবহিত করার জন্য। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ এখন নেই। যদি সেটা করতে হয় তাহলে গেজেট প্রকাশ করতে হবে, তাহলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে এবং পার্লামেন্টে পাস করাতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের নাম রাজাকার হিসেবে এ তালিকায় নেই। তাঁরা তালিকার ঊর্ধ্বে থেকে দেশের স্বাধীনার বিপক্ষে কাজ করেছেন। তালিকার রাজাকাররা এখন কোথায় কী অবস্থায় রয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। তারা এখন কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে কি না, সেটাও জানা যায়নি।