‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করা ও সমুন্নত রাখার জন্য হরকাতুল জিহাদের এই জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত মর্মে  মনে করেন আদালত।’

আজ সোমবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা মামলায় ১০ জনের ফাঁসির আদেশকালে এক পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা ঘটিয়েছে।’

‘আসামিরা হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম বাংলাদেশের (হুজি) সদস্য। তাদের ধারণা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির লোকেরা কাফের, বিধর্মী, নাস্তিক, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নয়, ইসলাম ধর্মের শত্রু এবং আল্লাহ খোদা মানে না। সে কারণে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশে আসামিরা এই বোমা হামলা ঘটিয়েছে। এ ছাড়া তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত এবং বিব্রত করার জন্য এই বোমা হামলা করা হয়েছে।’

পর্যবেক্ষণে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘আসামি মুফতি মঈন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও মাওলানা সাব্বির আহমেদের বিরুদ্ধে দুইটি করে, শওকত ওসমানের বিরুদ্ধে তিনটি, আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে ছয়টি, আনিসুল মুরছালিন, মহিবুল মুত্তাকিন ও জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে চারটি করে মামলা রয়েছে। এই আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাসহ বিস্ফোরক আইনের মামলা রয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে তারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে।’

আসামিরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতা শামীম ওসমান এমপির অফিসে বোমা হামলা ও রমনা বটমূলের বোমা হামলা মামলার আসামি। এমনকি আসামিরা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলারও আসামি।

আসামিদের প্রতিটি বোমা হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ মারা গেছে। আসামিরা ইসলামি জঙ্গি হরকাতুল জিহাদের সদস্য এবং আসামি আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি হরকাতুল জিহাদের বাংলাদেশের হেডকোয়ার্টার ছিল।

বিচারক আরো বলেন, আসামিরা এই মামলায় পল্টন ময়দানে কমিউনিস্ট পার্টির মহাসমাবেশে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি বোমা হামলার মাধ্যমেও পাঁচজন নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেছে।

‘আসামিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলা ঘটায়। এ হামলার মাধ্যমে তারা নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’

আদালত আরো বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই কারণে এই দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করা ও সমুন্নত রাখার জন্য হরকাতুল জিহাদের এই জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত মর্মে আদালত মনে করে।’

এর আগে সকালে ২০০১ সালে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মহাসমাবেশে বোমা হামলা মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দুই আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ১৯তম বার্ষিকীতে আজ এ রায় দেওয়া হলো।