স্কুলের কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ, শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা
ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়া হাইস্কুলের সম্পত্তি আত্মসাৎসহ আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী বিলকিস রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) তহিদুল ইসলামের আদালতে মামলা দুটি আমলে নেওয়া হয়।
এর আগে দুদক কুষ্টিয়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকারিয়া স্বাক্ষরিত এজাহারটি আদালতে দাখিল করেন দুদকের কৌঁসুলি আল-মুজাহিদ মিঠু।
আসামিরা হলেন কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমান এবং তাঁর স্ত্রী বিলকিস রহমান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের স্ত্রী বিলকিস রহমান জ্ঞাত আয় বহির্ভুত ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার,৫৬৪ টাকা অর্জন করেছেন। দুদকের এ সম্পর্কিত প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। একইভাবে প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৮ আগস্টের মধ্যে ৫২ লাখ,৫৫ হাজার,১৬৯ টাকা আয়ের বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি। এজন্য খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে দুদক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক এসএম কাদরী শাকিল বলেন,‘অনেক দেরিতে হলেও দুদকের এই পদক্ষেপে আমি খুশি। তবে দুদক যে কোটি টাকার সম্পত্তির হিসাব দিচ্ছে,তা আরও তদন্ত করে প্রকৃত চিত্র ফুটে তোলা দরকার। আমার মনে হয় এই পরিমাণটা আরও বেশি হওয়ার কথা।’
সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারসহ বিদ্যালয়টিকে রক্ষার দাবি জানান শাকিল।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চিকিৎসকনেতা ডা. আমিনুল হক রতন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘এতোদিন ধরে আমাদের চোখের সামনে তিল তিল করে বিদ্যালয়টির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। আমরা অনেকেই দেখেছি কিন্তু কার্যত কেউই মুখ খুলে কিছু বলতে পারিনি। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন কিছু স্বার্থন্বেষী প্রভাবশালী মহলের অর্থ আয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দুদক এতোদিন পর মামলাটি করলেও আমি বলতে চাই, এই প্রতিষ্ঠানের সম্পদ লুটপাট করে এর অস্তিত্বকে যারা বিপন্নের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তাদের সবার মুখোশ উন্মোচিত করা হোক। সেইসঙ্গে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি তার যথার্থ প্রাণ ফিরে পায় সেই দাবি করছি। আমরা শহরবাসী জানতে চাই, প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠানটির কী পরিমাণ সম্পদ লুটপাট হয়েছে?’
দুদকের মামলার বিষয়ে জানতে চেয়ে কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. একে এম মুনির বলেন, ‘দুদকের মামলার বিষয়ে আমি শুনেছি। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। স্কুলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া দুদক যে মামলা করেছে তার মেরিট দুর্বল। এ মামলায় শেষ পর্যন্ত কিছু হবে না।’