সৌদি খেজুর চাষ করে সফল জাকির
বাগেরহাটের উপকূলীয় রামপাল অঞ্চলে লবণের পরিমাণ বাড়ায় সব ধরনের ফসলের চাষ প্রায় অসম্ভভ হয়ে পড়েছে। এক সময় এ অঞ্চলের ধান, নারিকেল, সুপারী দেশের অন্য অঞ্চলে রপ্তানি হতো। এখন সেই অঞ্চলে এসব অর্থকরী ফসলের উৎপাদন প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। সেই লবণাক্ত অঞ্চলে এখন সৌদি খেজুরের চাষ করে আশা জাগিয়েছেন। ঠিক যেন মরুভূমিতে একটুখানি উদ্যান।
বাগেরহাটে শহরের আমলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন। পেশায় একজন আইনজীবী। বাগেরহাট জজকোর্টে আইন পেশা নিয়োজিত। এর পাশাপাশি তিনি এখন সৗখিন কৃষক।
জেলার উপকূলীয় উপজেলা রামপালের মল্লিকের বেড ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামে ১৫ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন তাঁর শখের এই বাগান। ওই এলাকার পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এখানের গাছ-গাছালিতে উৎপাদন কমে গেছে। এমনকি অনেক স্থানে নারিকেল, সুপারির গাছ পর্যন্ত মারা গেছে। সেখানে ২০১০ সালে এই জমিতে শুরু করে প্রথমে কুলের চাষ। এরপর পেঁপে। পর্যায়ক্রমে এই জমিতে আম ও ভিয়েতনামের নারিকেলের চাষ শুরু করে। অবশেষে ২০১৯ সালে ইউটিউব দেখে সৌদি খেজুরের চারা লাগাতে উদ্বুদ্ধ হন। ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে অনেক টাকা ব্যয়ে খেজুরের চারা কিনে নিজের বাগানে লাগান। এখন তাঁর বাগানে তিনশ খেজুরগাছ রয়েছে। এ বছর অর্ধশতাধিক গাছে খেজুরও ধরেছে। সব মিলিয়ে তিনি এখন সৌখিন চাষি থেকে পাক্কা চাষিতে পরিণত হয়েছেন।
সৌখিন কৃষক ও খেজুর বাগানের মালিক অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন জানান, এই বাগান করতে গিয়ে অনেক চাড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। যেমন পথে পথে প্রত্যারিত হয়েছেন। তেমনি অর্থের অপচয় হয়েছে আশার কয়েকগুণ বেশি। এরপরও তিনি এখন পাক্কা কৃষকে পরিণত হয়েছেন। এই খেজুরের বাগান নিয়ে এক সময়ে অনেকে খারাপ মন্তব্য করলেও এখন ফল আসাতে তাদের সেই মন্তব্য দূর হয়ে গেছে।
খেজুর বাগান এলাকার এক কৃষক লাল মাহমুদ হাওলাদার ও যুবক শহিদুল ইসলাম শেখ জানান, বেকার যুবকরা দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি ঘেরের পরিত্যক্ত বেড়িবাঁধের উপর সবজির পাশাপাশি খেজুর বাগান করে পেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। এক সময়ে এই বাগান দেখে দূর থেকে বাজে মন্তব্যও করেছেন অনেকে। এখন তাদের প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এক সময়ে ধারণা ছিল লবণ এলাকায় কিছুই হবে না। এখন দেখছি আমাদের ধারণা মিথ্যা হচ্ছে। সেখানে অনেক সবজি উৎপন্ন হচ্ছে। এই ধরনের চাষাবাদে এলাকার বেকার যুবকরা ও বিত্তবানেরা আগ্রহী হলে খেজুর চাষ করে দক্ষিণাঞ্চলের এই লবণাক্ত জেলাকে সবজি বিপ্লবের পাশাপাশি খেজুরের বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে এই কৃষি কর্মকর্তার ধারণা।