সুন্দরবনের বিপরীতে ভারতীয় অংশে দুই বাংলাদেশির রহস্যজনক মৃত্যু
সাতক্ষীরার পশ্চিম সুন্দরবনের বিপরীতে ভারতীয় এলাকায় দুই বাংলাদেশির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাঁরা বাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে প্রচার হলেও মৃত্যুর অন্য কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতরা হলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের পশ্চিম কৈখালি গ্রামের রতন (৪২) এবং একই গ্রামের মিজানুর রহমান (৪০)। বাঘের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া আবু মুসা কৈখালি ইউনিয়নের জয়াখালী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি নিহত মিজানুর আবু মুসার বোনের জামাই।
কৈখালি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম নিহত দুজনের পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলেন, ‘গতকাল বুধবার রতন, মিজান ও মুসা একসঙ্গে কাঁকড়া ধরার জন্য সুন্দরবনে যান। তাঁরা পথ ভুলে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়েন। তাঁরা ভারতীয় এলাকার ঝিল নদী সংলগ্ন বাকশা খালের বড়মুখো ছোটমুখো পয়েন্টের মাঝামাঝি এলাকায় বাঘের হামলার শিকার হন। মানুষখেকো বাঘটি প্রথমে মিজানের ওপর হামলা করে। মিজান তাঁর হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ সময় তাঁকে বাঁচাতে সঙ্গী রতন বাঘের ওপর পাল্টা হামলা চালান। এ সময় বাঘ মিজানকে ছেড়ে রতনের ওপর আক্রমণ করে। ঘটনাস্থলেই দুজন প্রাণ হারান।’
সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম আরো বলেন, ‘দুজনের সঙ্গে বাঘের এই লড়াই দেখে আতংকিত মুসা নদীতে ঝাঁপ দেন। এ সময় তাঁকে ভারতের গোসাবা থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে। মুসা ভারতীয় এলাকা থেকে আজ শুক্রবার সকালে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। লাশ দুটি কোথায় তা মুসা নিজে বা ভারতীয় শমসেরনগর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরাও জানাতে পারেননি। তবে বিএসএফ লাশ দুটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁদের মরদেহ ফেরত চেয়ে ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করছে স্বজনরা।’
এদিকে, অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন সুন্দরবনের নদীতে চলছে ভাটিখার গোন। এই মুহূর্তে মাছ বা কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য কোনো জেলে নদীতে নামে না। মিজানুর রহমান একজন চোরাচালানি। স্থানীয় লতিফ ও মামুন কয়ালের নেতৃত্বে গরু ও মাদক চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিজান জড়িত।
সূত্রগুলোর ধারণা, তারা কেউ বাঘের হামলায় নিহত হননি। গরু ও মাদক পাচারকালে ভারতীয়দের হাতে মোল্লাখালি এলাকায় কোনো না কোনোভাবে তাঁরা নিহত হয়েছেন বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন।
মুসার বাবা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘জামাই মিজান আমার ছেলে মুসাকে তাঁর সঙ্গে ডেকে নিয়ে গেছে। মুসা কখনো জঙ্গলে মাছ ধরতে যায় না।’
কৈখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত তাঁদের যে বাঘে খেয়েছে এমনটি নিশ্চিত করা যায়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যানন্ট কর্নেল ইয়াসিন চৌধুরী বলেন, ‘রতন ও মিজানের নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। রতন ও মিজান বিএসএফের গুলিতে নিহত হননি। এ বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি।’
অধিনায়ক আরো বলেন, ‘বিজিবি এবং বিএসএফ পৃথকভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে লাশ দুটির খোঁজ করছে। বেঁচে যাওয়া মুসা আজ শুক্রবার সকালে কৈখালি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে ভারতে তাঁর অবস্থান কোথায় এটা তিনি নিশ্চিত করেননি। দুজন নিহত হয়ে থাকলে আইনগতভাবে তাদের লাশ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।’
সুন্দরবনের কৈখালি ফরেস্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাইদ বলেন, ‘রতন, মিজান ও মুসা নামের কেউই আমাদের কাছ থেকে পাস নেননি। তাঁরা যে বাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।’