সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে ২১ ডিসেম্বর বিএনপির কালো পতাকা উত্তোলন
সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদ জানাতে আগামী ২১ ডিসেম্বর সারা দেশে দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ অথবা কালো পোশাক পরিধান করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের স্থায়ী কমিটির নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওসহ সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় বেশ কিছু বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত নতজানু সরকারের দুর্বল নীতির কারণে সীমান্তে হত্যা বিরামহীনভাবে চলছে বলে স্থায়ী কমিটি মনে করে। মানবিক অধিকার লঙ্ঘন করে এই সব হত্যাকাণ্ড ঘটার পরেও সরকারের নির্বিকার ভূমিকা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে বলে সভা মনে করে। অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য নতজানু সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার গভীরেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান রয়েছে। বর্তমান সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক স্থবিরতার প্রধান কারণ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য সবার আগে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচিত সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নৈতিক ও যৌক্তিক ভূমিকায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন এই অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও সরকার রাখাইনে ফেরত পাঠাতে পারেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছারও প্রমাণ নেই। দীর্ঘদিনের এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে না পারা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম ব্যর্থতা। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এহেন মুহূর্তে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোর ‘না’ উপেক্ষা করে বঙ্গোপসাগরের মুখে নুতন সৃষ্ট ভাসানচর দ্বীপে রোহিঙ্গাদের একাংশকে স্থানান্তরের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দাবি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা অবগত হয়েছি যে, গত ৩ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে থেকে এক হাজার ৬৪২ জনের একটি দলকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এ সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এ সংকট নিরসনে সমান দায়িত্ব রয়েছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় না করে সম্পূর্ণ এককভাবে বাংলাদেশ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করে সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নাখোশ করেছে। এটি রোহিঙ্গা শরণার্থী সমাধানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতার একটি নতুন সংযোজন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভাসানচর প্রকল্পটি মূলত সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্প-৩-এর একটি বর্ধিত প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বর্তমান আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি মেগা প্রজেক্ট। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটিতে প্রাথমিকভাবে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য প্রজেক্টের ন্যায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করে তা তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। যথাযথ টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই এসব প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ রয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, হতাশার কথা হলো, এই প্রকল্প তথা সরকারের সুদূরপ্রসারী দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাইতে কিছু ‘দলকানা সাংবাদিক’ দিয়ে ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরের পক্ষে নানা ধরনের প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। ভাবখানা এমন, যেন রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে প্রেরণ করাই সংকট সমাধানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এটাই যেন প্রত্যাবাসন।
গত ১২ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির এই ভার্চুয়াল বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহুমদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সদ্য প্রয়াত দলের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রহমান, বেগম নুরজাহান ইয়াসমীন, বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি আহমেদ সাজা, সাবেক সচিব শহিদুল আলম, দৈনিক সংবাদের সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামানসহ কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
২০ দলীয় জোটের নেতা ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্থায়ী কমিটির সভায় গত ১০ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিত ২৮টি পৌরসভা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের ভোট ডাকাতি নির্বাচনের নিন্দা জানানো হয়।