সীতাকুণ্ডে লকডাউনের মধ্যে পুলিশ-গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বার আউলিয়া এলাকায় লকডাউনের মধ্যে রাস্তা অবরোধ করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এসময় গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে পুলিশের ফাঁকা গুলি চালানো এবং পুলিশের ওপর গ্রামবাসীর ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বার্তা সংস্থা ইউএববি এ খবর জানিয়েছে।
পুলিশ ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের কারণে উপজেলার অন্যান্য এলাকার মতো ফুলতলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামে যাতে বাইরের কোনো ব্যক্তি ও শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যে বাঁশ দিয়ে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের গাড়ি চলাচল তথা গ্রামের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয় কয়েকদিন আগে। যার ফলে লোকমান হোসেনের মালিকানাধীন জিরি সুবেদার শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারছিল না। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও ইয়ার্ড মালিকের সঙ্গে গ্রামবাসীর বিরোধ বাঁধে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার ব্যারিকেড তুলে দিতে চাইলে গ্রামবাসী বাধা দেয়।
বিষয়টি ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানালে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড থানার পুলিশ গিয়ে রাস্তা থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে দেয়। এসময় গ্রামবাসীর সাথে পুলিশের তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এরপর দুপক্ষের মধ্যে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হলে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ ঘটনায় জড়ো হওয়া গ্রামের লোকজনকে বিতাড়িত করতে পুলিশ ১৫/২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে বলে অভিযোগ করে গ্রামবাসী।
গ্রামবাসীরা বলেন, সারাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন চলেছে, আমাদের গ্রামে যাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য গ্রামবাসী স্বেচ্ছায় লকডাউন করে। কিন্তু জিরি সুবেদার শিপব্রেকিং ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের ইয়ার্ড চালু করে বাইরে থেকে গাড়ি গ্রামে ঢুকাচ্ছে। আমরা বাঁধা দিলে তারা পুলিশ এনে গ্রামবাসীর ওপর নির্যাতন করে।
তাঁরা অভিযোগ করেন, জিরি সুবেদার কর্তৃপক্ষ এখানে কোটি কোটি ব্যাবসা করলেও বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষকে কোনো রকমের সহযোগিতা করেনি। এ ছাড়া গ্রামের রাস্তাটা তাদের গাড়ি চালিয়ে নষ্ট করলেও রাস্তাটা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
এদিকে গ্রামবাসীর অভিযোগগুলো অস্বীকার করে জিরি সুবেদার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের প্রতিনিধি মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘গ্রামের কিছু ব্যক্তি লকডাউনের নামে রাস্তা বন্ধ করে ইয়ার্ডে ডাকাতি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কয়েকদিন আগেও তারা দারোয়ানকে মেরে ইয়ার্ডে ডাকাতি করেছে। আর করোনাভাইরাসের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে আমরা গ্রামবাসীর জন্য ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, এলাকাবাসী বাঁশ দিয়ে রাস্তা চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত গ্রামবাসী পুলিশের ওপর পাথর ছুড়ে মারে। তবে গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে ফাঁকাগুলি ছোড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে খবর পেয়ে রাতে ঘটনাস্থলে যান এএসপি (সীতাকুণ্ড) সার্কেল শম্পা রানী শাহা, সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমেদ, বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার এসআই সাইফুল ইসলামসহ ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশসহ শতাধিক পুলিশ। পরে সমঝোতার আশ্বাসে গ্রামবাসী মধ্যরাতে ঘটনাস্থল ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান।