সিলেটে এক গ্রামে চার শতাধিক প্রতিবন্ধী, প্রতি পরিবারেই হাহাকার
এক গ্রামে চার শতাধিক প্রতিবন্ধী! সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আমতৈল গ্রামে প্রায় প্রতিটি ঘরে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষ, যাদের বেশিরভাগই শিশু। প্রতিদিন তালিকাভুক্তির নতুন আবেদন জমা পড়ায় উদ্বিগ্ন সমাজসেবা অফিস। দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, অসচেতনতাসহ বিভিন্ন বিষয়কে দায়ী করে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করে চিকিৎসকরা।
সিলেটের আশ্চর্য হওয়ার মতো গ্রাম আমতৈল যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। স্থানীয়দের কাছে এটি প্রতিবন্ধী গ্রাম নামেই পরিচিত। জন্ম থেকেই ফুটফুটে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। অভাবের সংসারে তাদের দু-একবার নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে। এরপর পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় চিকিৎসার খরচ, তাই আর কেনা হয় না ওষুধ। প্রতিবন্ধী এক শিশুর বাবাই বললেন, ‘আমার যদি সামর্থ্য থাকত, আর চিকিৎসা করাতে পারতাম, তাহলে আমার বাচ্চা সুস্থ থাকত।’
আমতৈলে প্রতিটি পরিবারে সন্তান সংখ্যা বেশি। গ্রামে চার শতাধিক প্রতিবন্ধী। চারপাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। রোগব্যাধি তাঁদের নিত্যসঙ্গী। এমন অবস্থা দেখে মনে হয়, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ গ্রামে।
বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুনু মিয়া বলেন, ‘কয়েকশ স্যানিটেশন আমি নিয়েছি। এরই মধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। আমার মনে হয়, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে স্যানিটেশনগুলো বণ্টন করতে পারব।’
এক গ্রামে কেন এত প্রতিবন্ধী, কেনই বা বেড়ে চলছে এর সংখ্যা—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নিবাস রঞ্জন দাস বলেন, ‘ওই গ্রামটি আসলে গ্রামের মতো মনে হয় না, শহরের বস্তির মতো মনে হয়—প্রচণ্ড ঘনবসতি। এরই মধ্যে অনেকেই এখানে ভাতা পাচ্ছেন, কার্ডও দেওয়া হয়েছে। আমি আজও পরিদর্শন করলাম। আমি নির্দেশ দিয়েছি, যাতে এই গ্রামটিকে গুরুত্ব দিয়ে অধিকাংশ প্রতিবন্ধীকে ভাতা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হয়।’
সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘যেসব মৌলিক উপাদানের প্রয়োজন—শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা বসবাসের যে উপযোগী অবস্থা, সবগুলোর অভাব আছে গ্রামটিতে। সব দিক থেকে অ্যাপ্রোচ থাকলে হয়তো আমরা এটাকে কিছুটা হলেও নিবারণ করতে পারব।’ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।