সিরাজগঞ্জে ১৫০ মিটার স্পার বাঁধ ও শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র স্রোতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের ১৫০ মিটার সিমলা স্পার বাঁধ সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে শতাধিক ঘরবাড়ি, বসতভিটা, গাছপালা মুহূর্তের মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এ ছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। অনেকে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনকবলিত মানুষ বাঁধের ওপর ও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাঁধের ওপর ঝুপড়িঘর তুলে বসবাস করছে অনেক পরিবার। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে তারা। স্পার বাঁধ ধসের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা।
২০০০-০১ অর্থবছরে ভাঙন এড়াতে যমুনার গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষ্যে সিমলা এলাকায় স্পার বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। এরপর বেশ কয়েকবার স্পারটি সংস্কারও করা হয়েছে। স্পারটি গত ১ জুন প্রথম দফায় প্রায় ২৫ মিটার ধসে গিয়ে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ধস ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু গতকাল রাতে পুরো স্পারটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এদিকে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চৌহালী উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট রয়েছে।
স্পার বাঁধ ধসের ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বিস্তারিত কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় লকডাউনে আছি আমরা।’
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলীম জানান, এবার আগাম বন্যা হওয়ায় কাওয়াকোলা ইউনিয়নে অনেক ক্ষতি হয়েছে। পাট, ধান, তিল, বাদামের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ২৪টি গ্রাম। ইউনিয়ন পরিষদ ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। তারপরও আরো ত্রাণের প্রয়োজন। এ ছাড়া বেড়াবাড়ি ও কৈগাড়ী জড়তা এলাকায় নদীভাঙন হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, বন্যায় জেলার কাজীপুরে ৯টি ইউনিয়ন, সদরে আটটি, বেলকুচিতে পাঁচটি, উল্লাপাড়ায় দুটি, শাহজাদপুরে চারটি ও চৌহালী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৭৮ হাজার ৪৫৭টি পরিবারের তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৫ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ৬৩৩টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং পাঁচ হাজার ৮০৫টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৪০০ টন চাল (জিআর) বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ১৪২ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মজুদ আছে ২৫৮ টন চাল। শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যের জন্য চার লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।