সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙনে বিলীন শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি
অব্যাহত ভাঙনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার খুকনী, কৈজুরী, জালালপুর ও সোনাতনী ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভাঙনে ঘরবাড়ি ছাড়াও শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিত মানুষগুলো বাঁধের ওপর ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে একটি মসজিদ, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এনায়েতপুর থানা, এনায়েতপুর কাপড়ের হাটসহ বহু স্থাপনা ও ফসলি জমি। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে কাজ করছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর উজানে কাজীপুর উপজেলা থেকে ভাটির শাহজাদপুর উপজেলা পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটার নদী পথ রয়েছে সিরাজগঞ্জে। এই নদী পথের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ভাঙন। মূলত জুন-জুলাই বর্ষা মৌসুম।
এ সময় নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে আগেভাগেই যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে যমুনার তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে।
এতে শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, ঘাটাবাড়ী, বাঐখোলা, কুটি, পাকড়তলা গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি, শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া সোনাতনী ও কৈজুরি ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে সোনাতনী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ প্রায় ১০টি গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর ও ফসলি জমি। স্থানীয়রা নিজ উদ্যেগে বাঁশ দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে কাজ করছে।
ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া গত ৩১ মে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সিমলা স্পার বাঁধের ২৫ মিটার এলাকা যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও সোনাতনী ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান জানান, যমুনার ভাঙনে তিনটি ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ী, বাঐখোলা, কুঠিপাড়া, পাকুড়তলা, সোনাতনী, বানতিয়ার, মাকড়া ও ভাটপাড়া এলাকার শতাধিক মানুষ বসতভিটা, সহায়-সম্বল সবকিছু হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান করতে ইউএনওকে অবগত করা হয়েছে।
জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ জানান, গত এক সপ্তাহে যমুনা নদীর ভাঙনে জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ী, বাঐখোলা, কুঠিপাড়া, পাকুড়তলা গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি, বিস্তীর্ণ ফসলের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ। ভাঙনে গৃহহারা অসহায় মানুষগুলো বিভিন্ন সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই-তিন বছর হলো এনায়েতপুর মেডিকেল কলেজ থেকে কৈজুড়ী ইউনিয়ন পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থায়ীভাবে কাজ করতে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি আগামী বছর শুস্ক মৌসুমে কাজ শুরু করতে পারব।’