সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় আজ
রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মহাসমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা ও অনেককে আহত করার ১৯তম বার্ষিকী আজ সোমবার। আজকের দিনেই ভয়াবহ ওই হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সকালে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা কমরেড হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা কমরেড আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুট মিলের শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কমরেড মোক্তার হোসেন মারা যান। পরে ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কমরেড বিপ্রদাস রায় ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে মারা যান। এ ছাড়া এই হামলায় সিপিবির অনেক নেতাকর্মী আহত হন।
হামলার ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় এ মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট (আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন) দেয় পুলিশ। এরপর ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ফের এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। সাত কর্মকর্তার হাত ঘুরে মামলার তদন্তভার পান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মৃণাল কান্তি। তদন্তকালে তিনি আসামি মুফতি মাঈনুদ্দিন শেখকে গ্রেপ্তার করেন।
মাঈনুদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানান, এ ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ (হুজি) জড়িত। অন্যদিকে আসামি মুফতি আবদুল হান্নান ২০০৬ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানান, সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় তাঁর দল হুজি জড়িত। পুনরায় তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট ও বিস্ফোরক মামলায় ৪ সেপ্টেম্বর ওই ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর পর শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। হত্যা মামলায় মোট ৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন—জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নান, মুফতি মাঈনুদ্দিন শেখ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা মশিউর রহমান, আবদুল হাই, শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, নুরুল ইসলাম, মহিবুল মুস্তাকিম, আনিসুল মুরসালিন ও রফিকুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে মুফতি মাঈনুদ্দিন শেখ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান, আরিফ হাসান সুমন ও মাওলানা মশিউর রহমান কারাগারে আছেন। বাকি সাতজন পলাতক। কারাগারে থাকা পাঁচ আসামির সবাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।
এদিকে, পল্টনের হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে আজ সিপিবির পক্ষ থেকে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, যুব ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।