সিংগাইরে লালনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি পরিবারের
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ দেওয়ানের ছেলে লালন দেওয়ান হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা সঠিক সময় পদক্ষেপ নিলে লালন দেওয়ান হত্যার শিকার হতো না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নিহত লালন দেওয়ানের ভাই হালিম দেওয়ান। এ সময় মামলার বাদী লালনের স্ত্রী মমতাজ বেগম, মেয়ে তৃষা দেওয়ান ও ছেলে শিবাহ দেওয়ানসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিংগাইরে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী প্রতিবেশী খন্দকার উজ্জ্বল বাঁশঝাড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার ইয়াবা লুকিয়ে রাখেন। ওই মাদক খোয়া যাওয়ায় উজ্জ্বল লালনকে সন্দেহ করে। লালন দেওয়ান ওই মাদক সম্পর্কে কিছুই জানেন না জানানোর পর উজ্জ্বল মাদকের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এর জের ধরে গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে আসামি উজ্জ্বল, তাঁর ভাই অনিক, করম আলী, ফাহিম, সোহান, আলী হোসেনসহ আরো চার-পাঁচজন লালন দেওয়ানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরের দিন ২৭ জনু পারিল খৈয়ামুড়ি এলাকায় লালনের লাশ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় সিংগাইর থানায় মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
নিহত লালন দেওয়ানের মেয়ে তৃষা দেওয়ান অভিযোগ করেন, মাদক ব্যবসায়ী উজ্জ্বলের সঙ্গে উপপরিদর্শক (এসআই) মামুনের ভালো সম্পর্ক আছে। তাঁর বাবাকে যেদিন অপহরণ করা হয়েছিল ওই দিনই পুলিশের কাছে বিষয়টি বলার পর পুলিশ কোনো গুরুত্ব দেয়নি। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর এসআই মামুন আসামি ফাহিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তখন আসামি ফাহিম জানান, উজ্জ্বল খন্দকার তাঁর বাবা লালন দেওয়ানকে নিয়ে গেছেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলে তাঁর বাবাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব ছিল।
মামলার বাদী নিহত লালন দেওয়ানের স্ত্রী মমতাজ বেগম সংবাদ সম্মেলনে জানান, উজ্জ্বলের মাদক খোয়া যাওয়ার পর তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। উজ্জ্বল মেয়রের আত্মীয় হওয়ার কারণে বিষয়টি সিংগাইর পৌর মেয়র খোরশেদ আলম জয়কে জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন উজ্জ্বল মাদকের বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করবেন না। কিন্তু তাঁর স্বামীকে হত্যার পর মেয়র বলেছেন, তিনি উজ্জ্বলকে এ বিষয়ে কিছুই বলেননি।
মমতাজ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, মেয়র খোরশেদ আলম জয় যদি সঠিক সময় উজ্জ্বলকে বলতেন, তবে তাঁর স্বামী হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন না। এ ছাড়া হত্যার প্রায় দেড়মাস হলেও পুলিশ মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আসামির আত্মীয়-স্বজনরা টাকার বিনিময়ে মামলা উঠিয়ে আপসের জন্য চাপ দিচ্ছে। তিনি এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বর্তমানে দৌলতপুর থানায় কর্মরত থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই ) আল মামুন জানান, গত ২৬ জুন রাতে লালনের স্ত্রী ও স্বজনরা সিংগাইর থানায় এসে জানান, ফাহিম দেখেছে লালনকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। পরে ফাহিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে ফাহিম জানান, গাড়িতে উজ্জ্বল খন্দকার ছিল। এ সময় তারা লালনকে ওই গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গেছে। তবে গাড়িতে ডিবি না র্যাব ছিল তা ফাহিম জানাতে পারেনি। তাৎক্ষণিক জেলা ডিবি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনার সঙ্গে ডিবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পরে লালনের স্বজনদের সাভারে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।
এসআই আল মামুন আরো জানান, উজ্জ্বলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক থাকার যে অভিযোগ তুলেছে তা সত্য নয়।
লালন দেওয়ান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিংগাইর থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, আলোচিত এই হত্যার পর এজাহারভুক্ত আসামি আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তির পর হত্যার সঙ্গে জড়িত জুয়েল, পিয়াল হাসান ও অপহরণকাজে ব্যবহৃত গাড়ির চালক সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মূল আসামিসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ক্যাপশন
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে লালন দেওয়ান হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারের সদস্যরা। ছবি : এনটিভি