সাভার উপজেলা আ. লীগের হাসিনা দৌলা সভাপতি
শেষ পর্যন্ত জল্পনাই সত্য হল। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন হাসিনা দৌলা আর মঞ্জুরুল আলম রাজীব হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সাভার সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষে এ ঘোষণাই এল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠে।
মুহুর্মুহু করতালি, উচ্ছ্বাস আর আনন্দধ্বনির মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হল প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে নতুন এই নেতৃত্বকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নেতৃত্বই ছিল অবধারিত, অপেক্ষা ছিল কেবল ঘোষণার মাত্র।
এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সভাপতি হলেন ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক হাসিনা দৌলা।
রাজধানীর উপকণ্ঠ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ জনপদ সাভারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাভার উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন? এমন প্রশ্নে বেশ কিছুদিন ধরেই তোলপাড় ছিল স্থানীয় রাজনীতি। কৌতূহল ছিল নানা মহলে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সভাপতির দায়িত্ব পেলেন হাসিনা দৌলা।
সাধারণ সম্পাদক পদে মঞ্জুরুল আলম রাজীব আসছেন তা ছিল এক প্রকার নিশ্চিত। এই পদে দ্বিতীয় কোনো প্রার্থী না থাকলেও সভাপতি পদে হাসিনা দৌলার বিপরীতে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী ওরফে মাসুদ চৌধুরী ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ কবির প্রার্থী হিসেবে বেশ সরব ছিলেন।
এরমধ্যে মাঝপথে ফিরোজ কবির নিরবে সরে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত সরব ছিলেন মাসুদ চৌধুরী। তবে পরিণতি আগাম টের পেয়ে শেষমেষ সম্মেলনের আগেভাগেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মাসুদ চৌধুরী।
যে কারণে প্রার্থিতা না থাকায় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কে আসছেন তা ছিল কেবল ঘোষণার অপেক্ষায়। শেষ পর্যন্ত হলও তাই।
সন্ধ্যার কিছু আগেই হাসিনা দৌলা ও মনজুরুল আলম রাজীবকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে পদপ্রত্যাশী মাসুদ চৌধুরীকে সিংহপুরুষ হিসেবেই উল্লেখ করে তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় বেশ সরব ছিলেন তার অনুসারীরা।
তবে সেই ‘সিংহ পুরুষের’ প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে স্বভাবতই হতাশ তার অনুসারী নেতাকর্মীরা।
নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় নেমে হাসিনা দৌলাকে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে ঘায়েল করেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মাসুদ শিবিরের কর্মীরা। বেশ আত্মবিশ্বাসীও ছিলেন তিনি। আগেই গণমাধ্যমকে বলেছিলেন কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হলে নিশ্চিত তিনি হবেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
অভিন্ন কথা বলেছিলেন ফিরোজ কবিরও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ধোপে টিকতে পারেনি তাদের নেতৃত্ব। টানা তৃতীয়বারের মতো সভাপতি হয়ে উল্টো সবাইকে চমকে দিয়েছেন হাসিনা দৌলা।
গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী পরে রাজনীতিতে আসেন হাসিনা দৌলা। স্বামীর গড়ে তোলা মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স নামের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকেই রাজনীতিতে অভিষেক তার।
আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখনই সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন তিনি। দল ক্ষমতায় এলে ত্যাগের পুরস্কার হিসেবে তাকে ঢাকা জেলা প্রশাসক হিসেবে মনোনীত করে সরকার। তবে এই ব্যবসায়ীর ত্যাগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রাথমিক তালিকায় সভাপতি হিসেবে তিনজনের নামই কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তবে সব বিবেচনা শেষে হাসিনা দৌলার নামটি কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত হয়ে আসে। খবরটি চাউর হতেই ধীরে ধীরে চুপসে যেতে থাকেন প্রতিদ্বন্দ্বী অপর দুই প্রার্থী।
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাভার উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা মঞ্জুরুল আলম রাজীব।
ছাত্রলীগ করে আসা এই নেতা জীবনে বহুবার রাজনীতির কারণে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার রাজনীতিতে ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় সম্প্রতি বর্ধিত সভা ডেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয় মঞ্জুরুল আলম রাজীবের।
নাম ঘোষণা করার পর উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। তারা বলছেন নতুন এই কমিটি হচ্ছে প্রবীণ এবং নবীনের সমন্বয়ে।
এই সম্মেলন পদ প্রত্যাশী অনেকের যেমন আশা ভঙ্গ করেছে তেমনি রাজনীতি থেকেও একজনকে গুডবাই জানিয়ে দিয়েছে। তিনি এক সময়ের দাপুটে নেতা সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার।
নবম সংসদের সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আলী হায়দার দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার সময় সভাপতি হাসিনা দৌলা ছিলেন এক অর্থে কোণঠাসা। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং সরকারি অনুষ্ঠানে হাসিনা দৌলা ছিলেন অবহেলা অনাদরে উচ্চারিত একটি নাম।
তবে কি প্রকৃতি আজ সে অবহেলা আর বঞ্চনার শোধ নিল?
সেই দাপুটে নেতার রাজনীতির সমাধি ঘটিয়ে ৭৩ বছর বয়সে আরো শক্তি নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সভাপতি হবার পর হাসিনার দৌলাকে ঘিরে এমন কথাই উচ্চারিত হচ্ছিল সম্মেলনের আনাচে-কানাচে।