সাভারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক স্থাপনা
সাভারের অসংখ্য ব্যবসায়ীর চোখে ঘুম নেই। বুলডোজার আর এক্সক্যাভেটর কখন কার মার্কেটের সামনে এসে হাজির হয়, এই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বহু ব্যবসায়ী।
জায়গা উদ্ধারে সাভারে শুরু হয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান। এর আগে বহুবার অভিযান পরিচালিত হলেও গত ৪০ বছরে অভিযানের এমন মাত্রা দেখেনি সাভারবাসী।
অভিযোগ পাওয়া যায়, এর আগে অভিযানের আতঙ্ক ছড়িয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতবদল হতো। নামকাওয়াস্তে অভিযান চালিয়ে এত দিন পরিচালিত হতো দায়সারা অভিযান। এসব অভিযান ছিল মূলত হকার উচ্ছেদ অভিযানের মতোই। কখনোই বুলডোজার কিংবা এক্সক্যাভেটরের আঁচড় লাগেনি সড়কের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার ওপর।
তবে এবার এই ব্যতিক্রম প্রত্যক্ষ করল সাভার। অভিযান থেকে রক্ষা পাচ্ছে না প্রভাবশালী ব্যক্তি-গোষ্ঠী কেউই।
আজ রোববারও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্টুরেন্ট, হকার্স লীগের অফিস, মসজিদ, গাড়ির গ্যারেজ, পাইকারি বাজার, কাঁচাবাজার, কলকারখানা, বিপণিবিতানসহ পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সওজ।
রাজধানীর গাবতলী থেকে সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক আট লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করেছে সরকার। সড়ক সম্প্রসারণের কাজের অংশ হিসেবে আজ চতুর্থ দিনের মতো এক্সক্যাভেটর হাইড্রোলিক হ্যামারের মতো ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামে সওজ অধিদপ্তর।
অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সওজের স্টেট ও আইন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ফারুকী। তাঁদের সহযোগিতার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ।
অভিযানের শুরুতে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে বহুতল স্থাপনার ওপর আঘাত হানতে শুরু করে সওজের হাইড্রোলিক হ্যামার। অভিযানের সময় কোনো আপত্তিই আমলে নিচ্ছেন না তাঁরা। সাভারের সিটি সেন্টার, মনসুর মার্কেট, ক্যাপ্টেন সামাদ মার্কেট, দিলকুশা মার্কেট, ইউসুফ টাওয়ার, রাজ্জাক মার্কেট, চৌরঙ্গী সুপার মার্কেট কোনোটিই রক্ষা পায়নি অভিযান থেকে।
দিলকুশা মার্কেটের পাশে সওজের জায়গা দখল করে বিশাল মাছের বাজার গড়ে তুলেছিলেন আবদুর রাজ্জাক। প্রতিটি মাছের ডালা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দিনপ্রতি আয় হতো দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা। অভিযানে ওই মাছের বাজারের অবৈধ অংশ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
আবদুর রাজ্জাক জানান, নিজের জায়গা-জমি মনে করেই তিনি এত দিন সরকারি জায়গা ভাড়া খাটিয়েছিলেন।
মাহবুবুর রহমান ফারুকী জানান, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে, সড়কের সীমানা থেকে দুপাশে ১০ মিটার করে ব্যক্তিমালিকানার জমিতেও কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইনেও এই বিধানটি যুক্ত করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ১০ মিটার স্থাপনা মুক্ত রাখা দূরের কথা, সড়কের বিদ্যমান জায়গা দখল করেই সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে হোটেল-রেস্তোরাঁ, কাঁচাবাজারসহ বেশকিছু বহুতল ভবন।
মাহবুবুর রহমান ফারুকী আরো জানান, বারবার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও দখলকারীরা কর্ণপাত করেনি; বরং উচ্ছেদ পরিচালনার সময় তাঁরা উচ্ছেদ কার্যক্রমকে ব্যাহত করছেন। তিনি বলেন, ‘এই অভিযানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মতো সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হচ্ছে। যে বা যারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, সরকারি জায়গা তাদের হাত থেকে দখলমুক্ত করা হবে।’ মহাসড়ক আট লেন প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত তাঁরা সড়কের জায়গাটুকুই দখলমুক্ত করছেন। পরবর্তী সময়ে সড়কের কাজ শুরু হলে নতুন আইনের আলোকে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে সড়কের সীমানা থেকে দুপাশে ১০ মিটারের মধ্যে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হবে।