সাত বছর পর যুবলীগনেতা লাভলু হত্যা রহস্য উদঘাটন
সাত বছর পর পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগনেতা রফিকুল ইসলাম লাভলু হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পিবিআই জানায়, হত্যাটি রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের সময় ছিনতাইকারীদের চিনে ফেলায় খুন হন লাভলু।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাওশা মিয়াপাড়ার পলাশ মিয়া (৩৪) ও নাটোরের লালপুর উপজেলার নওপাড়া গ্রামের তসলিম খা (২৮)। পলাশের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে বাঘায় দুটি ডাকাতি ও লালপুর থানায় একটি চুরির মামলা রয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে পিবিআই পাবনা কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ফজলে এলাহী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ফজলে এলাহী জানান, ২০১৪ সালে ১ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে যুবলীগনেতা রফিকুল ইসলাম লাভলু ও তাঁর খালাতো ভাই মোস্তাকিন মানোয়ার ইশতিয়াক মোটরসাইকেলে করে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন বাংলা কুটির থেকে ফিরছিলেন। এ সময় পাকশী স্টেশনের অদূরে রেললাইনের পাশের রাস্তায় তিন-চারজন ছিনতাইকারী তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। লাভলু ছিনতাইকারীদের চিনে ফেলেন। ছিনতাইকারীদের সঙ্গে জোরাজুরি করায় ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে লাভলুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং রশি দিয়ে হাত, পা ও মুখ বেঁধে ফেলে রেখে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় লাভলু ও তাঁর ভাই মোস্তাকিনকে প্রথমে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) নেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে পরের দিন লাভলু মারা যান।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আরো জানান, এই ঘটনায় নিহত লাভলুর ভাই আব্দুর রাজ্জাক বাবলু বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর-১, ২/৯/২০১৪। এরপর মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে। তারা তদন্ত করে কুলকিনারা করতে পারেনি। এরপর সিআইডির দীর্ঘ তদন্ত করে। সিআইডি আদালতে অভিযোগপত্র দিলে তার বিরুদ্ধে বাদী নারাজি জানান। এরপর মামলাটি আদালত থেকে পিবিআইতে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. আসাদউজ্জামান জানান, আলোচিত লাভলু হত্যা মামলাটি আদালত থেকে তদন্তের জন্য ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর পিবিআইতে আসে। নিহত লাবলুর খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পলাশ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে নাটোরের লালপুরের নওপাড়া গ্রামের তসলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসাদউজ্জামান আরো জানান, নিহত লাভলুর খোয়া যাওয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমের সূত্র ধরে প্রথমে সিরাজগঞ্জ থেকে ইয়াছিন নামের একজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, মোবাইল তার দুলাভাই পলাশ তাকে দিয়েছে। এরপর নানা কৌশলে পলাশকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসপি ফজলে এলাহী জানান, ধৈর্য্য আর লেগে থাকার ফলে লাভলু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে। এই মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি মতে লাভলু হত্যা মামলায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।