সাংবাদিক হত্যার বিচার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধন
আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির হত্যার বিচার দাবি, দোষীদের গ্রেপ্তার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন এবং এর অপপ্রয়োগ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ সাংবাদিকরা।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা চত্বরে এ মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা। তাঁরা তিন দফা দাবি জানিয়ে এই কর্মসূচি শেষ করেন।
সাংবাদিকরা ‘মোজাক্কির হত্যার দ্রুত বিচার চাই, প্রেসক্লাবে গুলি কেন জবাব চাই, প্রেসক্লাবে রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ হোক, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হোক, মোজাক্কিরকে মারল কে, প্রশাসন জবাব চাই’সহ নানা ধরনের প্লাকাড হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।
সাধারণ সাংবাদিকরা আজকের এই মানববন্ধনে তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো—সাংবাদিক মুজাক্কির রহস্য দ্রুত উন্মোচন করে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ব্যবস্থা করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে সেগুলো দ্রুত কমিটি করে সংশোধনের ব্যবস্থা করা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানি এবং এর অপপ্রয়োগ নিয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া।
এ সময় সাংবাদিক হত্যায় বিচারহীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগকে একযোগে ‘না’ লিখে প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারী সাংবাদিকরা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, বর্তমানে সাংবাদিকরা হত্যার ও হামলা-মামলার শিকার হলে বিচার না হওয়ার এক কালো অধ্যায় চলছে বলেও অভিযোগ করেন মানববন্ধনকারীরা। এ জন্য সরকারকে এসব হত্যা ও নির্যাতনের মামলার দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক রাজু হামিদ বলেন, ‘যদি সম্ভব হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুরোপুরি বাতিল করা হোক। আর তা যদি না হয়, তাহলে এই আইনের যেসব ধারা মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধক, সেগুলো সংশোধন করা হোক।’
আক্তার হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনভাবে লেখা বা বলার অধিকার সাংবাদিকদের থাকলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেন তাঁদের অন্তরে, আত্মায়, চিন্তায় ও মস্তিষ্কে একটি ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। সুতরাং একটি ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই ভীতি দূর করতে হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করতে হবে।’
বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির নিহত হলেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার নেই বা মামলার কোনো অগ্রগতি নেই—এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আক্তার হোসেন বলেন, সাংবাদিক সমাজের মধ্যে যখন অ্যাটাক হয়, আমরা তার বরাবরই প্রতিবাদ জানাই।
কোনো সাংবাদিক হত্যার শিকার হলে, কারো বিরুদ্ধে মামলা হলে এবং তার ওপর নির্যাতন করা হলে, কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয় না। সে ঘটনার দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হয় না। এসব কারণে রাস্তায় কিংবা পাড়া-মহল্লায় মাস্তান বা লুটেরা বাহিনী গড়ে উঠেছে। একজন সাংবাদিক যখন কোথাও নিউজ করতে যায়, তখনও তার মধ্যে ওসব ভয় কাজ করে। দিনে দিনে এসব কালো অধ্যায় হয়ে উঠছে। আমি মনে করি এখনি সরকারের উচিত, সাংবাদিক হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতনের দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত। আর তা না হলে সাংবাদিক সমাজ কিন্তু এক সময় সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’
এরপর তিন দফা দাবি পেশ করেন সাংবাদিক দীপন দেওয়ান। তিনি বলেন, আমাদের তিন দফা দাবি যদি সরকার অবিলম্বে না মেনে নেয়, তাহলে আমরা আজকের কর্মসূচি থেকে বলতে চাই; আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার জায়গাটি যখন বাধাগ্রস্ত হবে তখন সমাজে গুজব ও অনিয়ম ছড়াবে, সমাজের দর্পণ অর্থাৎ সাংবাদিকতা সমাজের পরিষ্কার প্রতিছবি দেখাবে না। আমরা মনে করি, সাংবাদিক হত্যা, সাংবাদিক নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সাংবাদিকতা ও স্বাধীন মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সেসব বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে স্বাধীন মত প্রকাশ কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। যাতে বাংলাদেশকে উন্নত করার পক্ষে সাংবাদিকরা তাদের উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারে এবং সমাজের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি বা অপকর্ম তুলে ধরতে পারে। সেজন্য সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার।’