সরকারের হস্তক্ষেপে মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেয়নি বিএসএমএমইউ : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকারের হস্তক্ষেপে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেয়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যে বোর্ড গঠিত হয়েছিল, সেই বোর্ডের যে রিপোর্ট, সেটা স্বাক্ষরসহ সুপ্রিম কোর্টের সামনে উপস্থাপন করবে। কিন্তু সেটা আজকে উপস্থাপন করা হয়নি। এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সময়ের আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে কোর্ট সাত দিন সময় বাড়িয়ে দিয়ে আগামী ১২ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে প্রায় ২০ মাস হচ্ছে তাঁকে (খালেদা জিয়া) জামিনে দেওয়া হচ্ছে না এবং বিভিন্নভাবে তাঁকে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও গণ্য করা হচ্ছে না। তাঁর প্রতি অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন করা হচ্ছে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় জাতি আজ বিক্ষুব্ধ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, আজ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ছিল। কিন্তু তাঁর প্রাপ্য জামিন আজও তিনি পেলেন না। বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলরকে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ শুনানির দিনও সেটা দেওয়া হয়নি। আর অ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই কোর্ট শুনানির জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। আদালতের সিদ্ধান্তে পুরো জাতি আজ শুধু হতাশই হয়নি, চরম বিক্ষুব্ধ হয়েছে।’
বিএসএমএমইউর মেডিকেল বোর্ড আদালতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার রিপোর্ট জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত অবমাননা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।
সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি, গতকাল রাতেই মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছিল। আর সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ আজ তাঁর জামিনে বাধা দেওয়া হয়েছে।’
গতকাল প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে বিচার বিভাগ এবং মেডিকেল বোর্ডের প্রতি একটা ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তাঁর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কথায় সরাসরি বোঝা যায় তিনি খালেদা জিয়ার মামলার বিচার চলার সময়ে সরাসরি বিচারে হস্তক্ষেপ করছেন। তিনি দেশের প্রধান নির্বাহী হয়ে যেমন বক্তব্য দিচ্ছেন, এটা আমরা মনে করি বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করার শামিল আর আদালত অবমাননার শামিল। তাঁর এসব বক্তব্যে পরিষ্কার যে তিনি এবং তাঁর সরকার চান না খালেদা জিয়া মুক্ত হন। এই মুক্তি চাওয়া কোনো করুণার ব্যাপার না। এটা তাঁর আইনগত প্রাপ্য। তাঁকে একমাত্র রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যই এ কাজগুলো করা হচ্ছে। যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আদালত অবমাননার শামিল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন। তাঁর এসব বক্তব্যে বোঝা যায়, তিনি মেডিকেল বোর্ড এবং বিচার বিভাগকে ভয় দেখিয়েছেন।’
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নামে চার্জশিট এবং আরেক দিকে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য। এতে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি, এটা বিচার বিভাগ এবং ডাক্তারদের ওপর চরম একটা থ্রেড।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।