সরকারের লকডাউন শিথিলে বিরোধী দলও একমত
সরকারি ছুটি না বাড়িয়ে লকডাউন শিথিল করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সরকারের প্রজ্ঞাপণ জারিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই লকডাউন শিথিল করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করে আসছিলাম। আমরা সব সময়ই বলেছি জীবনের সঙ্গে জীবিকার কথাও ভাবতে হবে। হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের কথা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেও সরকারের আজকের প্রজ্ঞাপণ সময়ের দাবি।’
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলীয় উপনেতা।
দুই মাসের অধিক সময় বন্ধ থাকার পর আগামী রোববার ৩১ মে থেকে সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত অফিস খুলছে। ১৫ জুন পর্যন্ত সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে কাজ করবেন। সীমিত পরিসরে খুলছে গণপরিবহনও।
আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শাখা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে বয়স্ক ও গর্ভবতী মহিলারা অফিসে যাবেন না। স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে যোগ দিতে হবে।
তবে বিএনপি এই লকডাউন শিথিল করে দেওয়াকে ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করেছে।আজ বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারি ছুটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তার প্রতি সরকারের ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন’।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘ছুটির নামে তথাকথিত লকডাউন তুলে নেওয়ার পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার কি প্রমাণ করতে চায়, করোনার থেকে তারা শক্তিশালী? এ ছুটি প্রত্যাহারের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। এটা সরকারের সবচেয়ে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ মার্চ সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত, তৃতীয় দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ও চতুর্থ দফায় ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত করা হয়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নত না হওয়ায় পঞ্চম দফায় ১৬ মে এবং সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করে সরকার।
২৫ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জরুরি পরিষেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং তাদের অধীন অফিসগুলো বর্ধিত সাধারণ ছুটির দিনে সীমিত আকারে খোলা থাকবে।
সর্বশেষ গত ১৪ মে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ১৭ থেকে যে সাধারণ ছুটি, শবেকদরের ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এবং ঈদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এখনো তা চলছে।
করোনার সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রেল, সড়ক, নৌ ও বিমান যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে সরকার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যেই গত ২৬ এপ্রিল কিছু পোশাক কারখানা পুনরায় চালু করা হয় এবং কারখানার মালিকরা দাবি করেন যে তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে শুধু ঢাকায় উপস্থিত কর্মীদের মাধ্যমে কাজ করছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে সর্বপ্রথম চীন থেকে সংক্রমণ শুরুর পর করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ পর্যন্ত ছড়িয়েছে বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে।
করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৫৯ জনের মৃত্যু হলো। এ ছাড়া দেশে নতুন করে আরো দুই হাজার ২৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ৪০ হাজার ৩২১ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত নিয়মিত বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।