সরকারের অবহেলায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, অনির্বাচিত সরকারের অবহেলা ও অযোগ্যতার কারণে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরকারের গঠিত কারিগরি কমিটির মতামত উপেক্ষা করে লকডাউন ঘোষণায় বিলম্ব এবং হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড, আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর না থাকায় সংক্রমিত রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আর মৃতের সংখ্য বাড়ছে।
আজ সোমবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রকৃতপক্ষে সরকারের কোনো জায়গায় কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় লকডাউন কার্যকর না করা, অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সীমাহীন দুর্নীতির ফলে পরিস্থিতি এখন মারাত্মক হুমকির মুখে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, করোনার টিকা সংগ্রহ ও আমদানিতে বেসরকারি ব্যবসায়ীকে সংযুক্ত করার কারণে সুপরিকল্পিতভাবে কোনো কৌশল না থাকার কারণে টিকা প্রাপ্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন তিন কোটি টিকার জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে বেসরকারি আমদানিকারকের মাধ্যমে আগাম মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করার কারণে বাংলাদেশের মূল্য পরিশোধিত টিকাপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রথম ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ টিকা তারা পাবে কিনা সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু বেসরকারি ব্যবসায়ীকে টিকা আমদানির সুযোগ ও একটি মাত্র দেশ থেকে টিকা আমদানির সিদ্ধান্ত দুর্নীতির কারণেই হয়েছে বলে সবাই মনে করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, লকডাউন ঘোষণার ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ চরম সংকটে পড়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ২০২০ সালে এ সব মানুষকে অর্থ সহায়তা ও সামগ্রিক অর্থনীতি সচল রাখার জন্য ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সরকার সে প্রস্তাব গ্রহণ তো করেনি, উপরন্তু বিদ্রুপ করেছে। একই সঙ্গে সরকার ঘোষিত কথিত প্রণোদনায় মালিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করেছে। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব জানান, ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা সরকারের তৈরি করা। আমি এর আগেও বলেছি, সরকার খুব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাগুলো যাতে ঘটে সে ব্যবস্থা নিয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন ২৬ মার্চে কয়েকটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ করেছিল। আমরা দেখেছি, বায়তুল মোকাররমে যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে অশান্ত করার জন্য পুলিশের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল, তারপরে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকেরা তাদের ওপর হামলা করেছিল। সে কারণে হাটহাজারীতে ওই ঘটনাগুলো ঘটেছে। সে ঘটনাগুলো কিন্তু তারা কখনোই বলছে না। তারা বার বার করে দোষ চাপাচ্ছে ধর্মীয় সংগঠনগুলো এবং বিএনপি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, এখনও বলছি, ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছি সেটা মানুষ মেরে ফেলার জন্য। সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০ বছরকে মানুষের রক্ত দিয়ে কলুষিত করা হয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি।
বর্তমানে গ্রেপ্তার অভিযানের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লকডাউনের সুযোগ নিয়ে ক্র্যাকডাউন করে নির্বিচারে আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ধর্মীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ মেনে নেবে না। তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, লকডাউনকে ব্যবহার করে ক্র্যাকডাউনে এরইমধ্যে বিএনপির তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে ধর্মীয় নেতা আলেম-ওলামাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা ধর্মীয় মানুষ, শ্রদ্ধার পাত্র তাদের গ্রেপ্তার করে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ধর্মীয় নেতাদের এভাবে গ্রেপ্তার-হয়রানি করা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা তাই আহ্বান জানাব, অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার করা হোক, যারা আলেম-ওলামা তাদের মুক্তি দেওয়া হোক এবং বিএনপির যেসব নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও সব মামলা তুলে নেওয়া হোক।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দাবি করেছি, ওলামাদের সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাদের মুক্তি দিতে হবে। আমরা বারবার বলেছি হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। যোগসূত্র একটাই—তারা কোনো বিরোধীমতকে সহ্য করবে না। তারা বলছে, হেফাজত তাণ্ডব করছে। মূলত তাণ্ডবগুলো করছে সরকার। এটা তাদের পরিকল্পিত।