সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁয় ফের বাড়ল চালের দাম
দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম নওগাঁয় পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এখানকার পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা ও চিকন চালের কেজিপ্রতি তিন থেকে চার টাকা এবং খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ধান-চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ধানের আমদানি কম। ধানের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে চালের বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের।
নওগাঁর বাজারে সাধারণত খুচরা ক্রেতারা সবাই শ্রমিক শ্রেণির ও নিম্ন বিত্তের মানুষ। চালের এই মূল্যবৃদ্ধি বিপর্যস্ত করে তুলেছে তাদের জীবন যাপনকে।
শহরের পৌর খুচরা বাজারে চাল কিনতে আসা শহরের কালীতলা মহল্লার সরকারি চাকরীজীবী মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য বেশি দামে চাল কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহে কাটারীভোগ চাল কিনেছি ৫৬ টাকা কেজি দরে। আজ মঙ্গলবার সপ্তাহের ব্যবধানে কাটারীভোগ চালই কিনতে হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে।’
শহরের দয়ালের মোড়ের রিকশাচালক মুকুল হোসেন বলেন, ‘চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে চার থেকে ছয় টাকা বেড়েছে। যা আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের কিনে খাওয়া সম্ভব না। সরকার যদি ভর্তুকি দিয়ে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতো তাহলে আমরা বাঁচতাম।’
নওগাঁ পৌর খুচরা চাউল বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন চাল কিনি এবং প্রতিদিনই বিক্রি করি। হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের বেচাকেনাও কমে গেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতিটি চালের দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৪২ টাকা কেজি ছিল, আজকের বাজারে ৪৬ টাকা কেজি, আটাশের চাল ৪৮ টাকা কেজি ছিল, এখন ৫২ টাকা কেজি। জিরাশাইল চাল ৫২ টাকা কেজি ছিল, এখন ৫৬ টাকা কেজি। কাটারীভোগ-সম্পাকাটারী ৫৬ টাকা কেজি ছিল, এখন ৬০ টাকা কেজি আর আতপ চাল ৮০ টাকা কেজি ছিল, এখন সেটা প্রকার ভেদে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’
নওগাঁ ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী বন্যা আর আমন ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। কৃষকরা কাটার পরেই ধান বিক্রি করায় এখন বাজারে আমদানি সংকটের কারণে ধানের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যার কারণে চালের দামও বেশি পড়ছে।’
বাজার স্থিতিশীল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা বা এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ‘আমন মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। আমাদের হিসাব অনুয়ারী ২০ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। যা চালের আকারে ২০ থেকে ২২ লাখ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন ঘাটতি হবে। এসব কারণেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।’
শুল্ক কমিয়ে বেসরকারিভাবে খাতের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল বিদেশ থেকে আমদানি করলে চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে জানান ওই ব্যবসায়িক নেতা।