সন্তানদের সামনে নদীতে মায়ের ঝাঁপ, চারদিন পর লাশ উদ্ধার
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সন্তানদের সামনে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া আফরোজা খানমের লাশ চারদিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকালে তাঁর লাশ মধুমতি নদীতে ভেসে উঠে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওই লাশ উদ্ধার করে।
আফরোজা কোটালীপাড়া উপজেলার সোনারগাতী গ্রামের প্রবাসী আলিমুজ্জামান তালুকদারের স্ত্রী। তাঁর বাবার বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। তিনি টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা গ্রামে ভাড়াবাড়িতে মেয়ে ফাহমিদা (৬) ও ছেলে আব্দুস ছালামকে নিয়ে বসবাস করতেন।
টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলেন, ‘আফরোজা খানম গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী মধুমতি নদীর শেখ লুৎফর রহমান সেতুর মাঝখানে যান। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সন্তানদের কাছে মোবাইল ও ব্যাগ রেখে মধুমতি নদীতে লাফ দেন। তখন তাঁর সন্তানদের চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে টুঙ্গিপাড়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। চারদিন পর আজ সকালে ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার দূরে ওই নারীর লাশ ভেসে ওঠে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা লাশ উঠিয়ে নদীর পাড়ে নিয়ে আসেন। আমরা ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তাদের কাছে হস্তান্তরের আবেদন করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি আফরোজার বাবা ও শাশুড়ির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষের অভিযোগ না থাকায় লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।’
আফরোজার মেয়ে ফাহমিদা বলে, ‘ব্রিজের মাঝখানে নিয়ে মা বলে, নদীতে টাকা পড়ে গেছে। টাকা আনতে যাচ্ছে বলেই নদীতে ঝাঁপ দেন।’
আফরোজার বড় বোন মাকসুদা বেগম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়াই আমার বোনের লাশ থানা থেকে বাঁশবাড়িয়া গ্রামে নিয়ে এসেছি। তাঁর স্বামী ও আমাদের পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাঁশবাড়িয়া গ্রামে জানাজা শেষে আমার বোনের লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১১ আমার বোনের বিয়ে হয়। সামান্য রাগ হলেই আফরোজা ক্ষেপে গিয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হত। এর আগেও তিনি একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে চেষ্টা করেছে। আফরোজার স্বামী ওমান প্রবাসী। তিনি মঙ্গলবার রাতেই আফরোজার মোবাইলে তিন হাজার টাকা পাঠায়। ওই টাকায় তাঁর বাজার, ঘরভাড়া, ছেলেমেয়েদের খরচ ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পরে বলে ধারণা করছি।’