শৈশবের আরামবাগে, আবেগাপ্লুত তাপস
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচার এখন তুঙ্গে। চারদিকে প্রার্থীদের গণসংযোগ, মিছিল, প্রচারে সরগরম রাজধানী। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা শহর। দম ফেলানোর মতো ফুরসত যেন নেই প্রার্থীদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ। সবাই ব্যস্ত ভোটারদের মনোরঞ্জনে।
ঢাকার দুই সিটি মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫৫ লাখ। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে ভোটার প্রায় ২৪ লাখ। প্রার্থীরা গত ১০ জানুয়ারি প্রতীক নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। এই প্রচার চালানো যাবে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
গড়ে হিসাব করলে দেখা যায়, এই সিটির একজন মেয়র প্রার্থীকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় চারটি ওয়ার্ড আর এক লাখের বেশি ভোটারের সঙ্গে হাত মেলাতে হয়। তাহলে হয়তো তিনি তাঁর গোটা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চালাতে পারবেন। প্রার্থীরা সেই ছক কষেই নির্বাচন কমিশনের প্রচারের সময়টুকু কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। তার বাইরে রয়েছে- নির্বাচনী নানা পরিকল্পনা, ভোটের প্রস্তুতির জন্য সভায় অংশ নেওয়াসহ নানা কাজ।
আজ রোববার দশম দিনের মতো নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন ঢাকা সিটির প্রার্থীরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দুপুরে প্রচার চালান রাজধানীর আরামবাগ এলাকায়।
দুপুর ১টার দিকে ব্যারিস্টার তাপস প্রথমে পৌঁছান মতিঝিলের নটর ডেম কলেজের সামনে। সেখানে তিনি একটি পথসভা করেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তারপর তিনি গণসংযোগ করতে হেঁটে আরামবাগের দিকে অগ্রসর হন। যথারীতি তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। চারদিকে স্লোগান, প্রচারপত্র বিলির কাজ করছেন। তার মধ্যে আশপাশের বাড়িঘর আর দোকানপাটে গিয়ে গিয়ে প্রার্থী ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন, ভোট প্রার্থনা করছেন। বিভিন্ন ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে উৎসুক মানুষ এই দৃশ্য দেখছিল। তাপস তাদের উদ্দেশেও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
হঠাৎ করেই আরামবাগে একটি বাসার সামনে থমকে দাঁড়ান প্রথমবারের মতো মেয়র পদে লড়াইয়ের ময়দানের আসা ঢাকা-১০ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য। যেন হঠাৎ করেই সব ব্যস্ততা উধাও হয়ে যায়, কিছুটা আনমনা হয়ে যান বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই সদস্য।
পুরোনো বাড়িটির নম্বর প্লেটে লেখা- ‘ভূঁইয়া মহল’, লুৎফুন নাহার, ৯২ আরামবাগ...। পাশের আরেকটি প্লেটে লেখা রাজিয়া সুলতানা...
মুহূর্তের মধ্যেই সেই বাড়ি থেকে কয়েকজন নারী, পুরুষ বেরিয়ে আসেন। তাপস যেন তাদের অপেক্ষাতেই ছিলেন। সিঁড়ি ভেঙে একজন অশীতিপর বৃদ্ধা এসে তাপসকে জড়িয়ে ধরেন। তাপসও তাকে কাছে টেনে নেন। কথা বলতে বলতেই তাপসের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেন বৃদ্ধা, তাপস মাথা নিচু করে দেন, দুজন একান্তে কথা বলেন। কেউ কেউ তাঁকে সামনে রেখে মোনাজাত ধরেন। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাপস নিজেও। যেন মুহূর্তের মধ্যে স্মৃতির ক্যানভাসে অন্যকোনো জগতে হারিয়ে যান ব্যস্ত ওই রাজনীতিবিদ।
পরে জানা যায়, আরামবাগের এই বাড়িতেই কেটেছে তাপসের শৈশবের দিনগুলো। বাবা শেখ ফজলুল হক মনি আর মা আরজু মনির সঙ্গে তিন বছর এই বাড়িতে ছিলেন তাপস। তাঁর দাদা শেখ নুরুল হকও তখন এই বাড়িতেই ভাড়া ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁরা ধানমণ্ডি এলাকায় চলে যান।
দুপুরে নির্বাচনী প্রচারে তাড়া ছিল বেশ। এর মধ্যেই আশপাশেও প্রচুর মানুষ জমে যাওয়ায় ভিড় হয়ে যায়। ফলে একসময় তাপস সবাইকে সালাম জানিয়ে আর নিজের জন্য দোয়া চেয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে যান নির্বাচনী বহর নিয়ে। পেছনে পড়ে থাকে শৈশবের মধুর স্মৃতি।
এ সময় তাপসের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদে কামরান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদ কামাল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক সাঈদ প্রমুখ।