শিশু ধর্ষণে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন, এসপি-সিভিল সার্জনকে তলব
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন ও অসামঞ্জস্য থাকার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জেলা সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের তলব করেছেন।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) এ ঘটনা তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ধর্ষণ মামলার কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ আদেশ দেন।
শিশু আসামির জামিন আবেদনের ওপর শুনানিতে দাখিল করা নথিতে ভুক্তভোগী শিশুর ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য বা অমিল থাকায় এ আদেশ দেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. শাহপরান চৌধুরী। গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর নির্যাতিতার বাবা নাসিরনগর থানায় একটি মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, ৪ সেপ্টেম্বর সাত বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মামলায় আসামির বয়স উল্লেখ করা হয় ১৫ বছর।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে পরদিন নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ৮ সেপ্টেম্বর শিশুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ অবস্থায় এ বিষয়ে ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একটি ডাক্তারি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। অপরদিকে জেলা হাসপাতাল থেকেও একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে আসামি হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করে। গত বছরের ৩ নভেম্বর এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এদিন আসামির বয়স প্রমাণের জন্য তার জন্মসনদ দাখিল করা হয়। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ছিল ১০ বছর। এ অবস্থায় হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার সিডি এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগপত্র দেন। পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা ও নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন। এ সময় জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ১২ সেপ্টেম্বরের দেওয়া একটি ডাক্তারি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
দুই প্রতিবেদনে অসংগতি দেখার পর আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা জেলা সদর হাসপাতালের আরেকটি (গত বছরের ২২ নভেম্বর) প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ অবস্থায় শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আদেশ দিলেন। আদেশে এসপি, নাগিরনগর ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা এবং সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ ১৩ জনকে তলব করা হয়েছে।