শাহানাজের বাইকের চাকা ঘুরলেই সংসার চলে
শাহানাজ আক্তার পুতুল। উবার মোটোতে স্কুটি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্বামী থাকলেও দুই সন্তানের ভরণপোষণ দেন না। বাধ্য হয়ে শাহানাজ রাত-বিরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তায় স্কুটি চালিয়ে সংসার চালান।
২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি শাহানাজের স্কুটিটি চুরি হয়ে যায়। এরপর গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সাড়া পড়ে যায়। পুলিশের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তাঁর স্কুটি উদ্ধার করা হয় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে। তখন জোবাইদুল ইসলাম জনি নামের এক আসামিকে স্কুটিসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তী সময়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় স্কুটি চুরির মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় আসামি জনি জামিনে মুক্ত আছেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৯ নম্বর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন নির্ধারণ করা আছে।
শাহানাজ আক্তার পুতুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখনও স্কুটি চালিয়ে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে হয় আমার। মূলত নারীদের কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য উবারে বাইক চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু নারী যাত্রীরা আমার কাছে কম আসে। তাঁরা (যাত্রী) ভয় পায়। আমি একজন নারী হয়ে কি ভালোভাবে গন্ত্যব্যে পৌঁছে দিতে পারবো? কিন্তু পুরুষ যাত্রীরা সাদরে গ্রহণ করে ও তাঁরা আমার বাইক সার্ভিসটি নেয়। আমি বাইক চালিয়ে সন্তানদের দুমুঠো আহার ও তাদের স্কুলে পড়াতে পারছি।’
২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি বাইকটি চুরির পর নিজের হতাশার কথা উল্লেখ করে শাহানাজ বলেন, ‘বাইকটি আমি ঋণ করে কিনি। উবার চালিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করতাম। পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আমি বাইকটি আবার ফিরে পাই। এরপর উবার আমার দুই মেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু তাঁরা শুধু ২০১৯ সালেই দুই মেয়ের পড়াশুনার খরচ দিয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগ নেত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দিপু মনি আমার দুই মেয়ের পড়াশুনার দায়িত্ব নেন। বর্তমানে আল্লাহর দোয়ায় আমি ভালো আছি।’
শাহানাজ আরো বলেন, ‘পুলিশ আসামি জনির কাছ থেকে এই বাইকটি উদ্ধার করেছে এবং সবাই তা দেখেছে। এমন অবস্থায় এই ধরনের আসামি জামিনে মুক্তি পেলে ভবিষ্যতে আরো অনেকের বাইক চুরি করতে পারে। এখন তাঁর বিচার হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি দুপুরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে স্কুটি বাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায় জনি নামের ওই যুবক। জনিও পাঠাওচালক। পরে ওই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শাহনাজ।