শত্রুতায় ছয় বিঘা জমির বীজতলা নষ্টের অভিযোগ
নওগাঁর পোরশা উপজেলায় অতিরিক্ত আগাছানাশক কীটনাশক দিয়ে প্রায় ছয় বিঘা জমির বোরো ধানের বীজতলার চারা নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে উপজেলার তিনটি মাঠে ১৬ কৃষকের বীজতলার চারা ঝলসে দেওয়া হয়েছে। বোরো ধান রোপণের আগ মূহূর্তে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানায়, ছয় বিঘা জমিতে তারা ৩০ মণের বেশি ধানের বীজ বপন করেছিল। ছয় বিঘা জমির বীজতলা দিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ধান রোপণের লক্ষ্য ছিল তাদের।
পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ। বীজতলা নষ্ট করার অভিযোগে ক্ষতিগ্রস্ত তিন কৃষক গত মঙ্গলবার উপজেলার সুতলী গ্রামের ওয়াসিম মণ্ডল নামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পোরশা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘাটনগর ইউনিয়নের দেউপুরা, সুতলী ও দেউপুরা মাঠে দেউপুরা, সুতলী, ধামানপুর ও সোমনগর গ্রামের ১৬ জন কৃষক বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করে। প্রায় দেড় মাস আগে ছয় বিঘা জমিতে ওই কৃষকেরা বোরো ধানের বীজ বপন করে। আর ১০ থেকে ১৫ দিন পর তাদের বীজতলার চারাগুলো জমিতে রোপণের উপযুক্ত হতো। এ অবস্থায় গত রোববার কিংবা সোমবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় সুতলী গ্রামের ওয়াসিম মণ্ডল ও তাঁর লোকজন বীজতলায় অতিরিক্ত আগাছানাশক কীটনাশক দিয়ে চারাগাছগুলো ঝলসে দেয়। অভিযুক্ত ওয়াসিম মণ্ডলের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলার মালিক মনিব আল রাজী, এনামুল হক শাহ্, মোস্তাফিজুর রহমান, হারুনুর রশিদ ও আনারুল হকের সোমনগর ও ধামানপুর মাঠে ১৫ বিঘা আবাদি জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে জোরপূর্বক জমি দখল করতে ভোগদখলীয় মালিক ও পুলিশের হামলার ঘটনায় ওয়াসিম মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।
এর আগেও জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ওয়াসিম প্রতিপক্ষের পুকুরের মাছ ও আম বাগানের ক্ষতি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে ওয়াসিম মণ্ডল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জমি নিয়ে তিন-চারজনের সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। ক্ষতি করার ইচ্ছে থাকলে তাদের বীজতলা নষ্ট করতাম। অন্য কৃষকদের ক্ষতি করে আমার লাভ কী? যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তারা নিজেরাই ক্ষতিকর কীটনাশক ছিটিয়ে বীজতলা নষ্ট করে আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে।’
বীজতলা নষ্ট হওয়ার বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা উপজেলা কৃষি বিভাগকে অবহিত করেছে। গতকাল বুধবার সকালে ক্ষতি হওয়া বীজতলা পরিদর্শন করেন পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘বীজতলার চারার জন্য এ বছরের আবহাওয়া খুব ভালো। অন্য মাঠগুলোর চারা এবার ভালোই রয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন গিয়ে বীজতলার চারা দেখে মনে হয়েছে, বীজতলায় অতিরিক্ত আগাছানাশক কীটনাশক প্রয়োগ করে চারাগুলো নষ্ট করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আমার বিশ্বাস।’
এ বিষয়ে পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান বলেন, ‘এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা একটা অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। আগাছানাশক ছিটিয়ে বীজতলা নষ্টের ঘটনায় যথাযথ তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে বিষয়টি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে এবং দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’