লক্ষ্মীপুর হানাদারমুক্ত দিবস বুধবার
লক্ষ্মীপুর হানাদারমুক্ত দিবস আগামীকাল বুধবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। এর মধ্য দিয়ে জেলাবাসী মুক্তি পায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদরদের হত্যা, লুট, আর নির্যাতনের হাত থেকে।
এর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময় লক্ষ্মীপুর জেলায় ছিল পাকস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের একছত্র আধিপত্য।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরকে হানাদারমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ১৯টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালান। এতে শহীদ হন ১১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক হাজার মুক্তিকামী বাঙালি। হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহরের মাদাম ব্রিজটি উড়িয়ে দেন। আজও এর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ব্রিজের লোহার পিলার দাঁড়িয়ে আছে।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসররা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালায়। হানাদার বাহিনী শহরের বাগবাড়ীতে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী হাজার হাজার নরনারীকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন চালাত। পাশবিক নির্যাতন শেষে নারীদের হত্যা করে শহরের বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে পুঁতে ফেলত। আবার অনেককেই ফেলে দিত খরস্রোতা রহমতখালী নদীতে।
যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে কথা হয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। তাঁরা জানিয়েছেন, ৭১ সালের ২১ মে ভোর রাতে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর ও দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা চালায় হানাদার বাহিনী। বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে, বহু মানুষকে গুলি ও বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এতে প্রায় ৪০ জন নিরস্ত্র মুক্তিকামী বাঙালি শহীদ হন।
একাত্তরের ১ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে। অবশেষে ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর শহীদদের কবর জিয়ারত, মোনাজাত, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।