লকডাউনে সরকারি গাড়িচালকদের ওভারটাইম নেওয়ার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ
গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউনের সময় সরকারি গাড়িচালকদের ওভারটাইমের অর্থ নেওয়ার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
পরে আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব সাংবাদিকদের জানান, করোনার সময় সারা বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের যানবাহন বন্ধ ছিল। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পুরো দেশে ছিল লকডাউন। জুলাই মাসের প্রথম দিকে সীমিত আকারে সরকারি অফিস আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি গাড়িচালকরা মাসে সর্বোচ্চ ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইমের বেতন-ভাতাদি পেতে পারেন। যেহেতু করোনার সময় অফিস-আদালত বন্ধ ছিল, সেহেতু সরকারিচালকদের ওভারটাইম করার কোনো সুযোগই ছিল না। অথচ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, অন্য সময়ের মতো লকডাউনের সময়ও প্রত্যেক গাড়িচালক প্রতি মাসে ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইমের বেতন-ভাতাদি নিয়েছেন।
আইনজীবী আরও জানান, সরকারি পরিবহণ বিভাগ থেকে প্রত্যেক গাড়িচালকের করোনাকালীন লকডাউনের সময় ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইমের বেতন-ভাতা ছাড়করণ করা হয়েছে। এভাবে ওভারটাইম না করেও চালকরা সরকারি রাজস্ব থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন, যা শুধু বেআইনি নয় বরং অনৈতিক ও সরকারি চাকরি আইনের পরিপন্থি।
এ বিষয়ে গত ২১ ডিসেম্বর মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষ একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে পরিশোধিত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট গাড়িচালকদের ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।
বিবাদীরা কোনোরকম পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক, পরিবহণ পুলের অতিরিক্ত সচিবকে বিবাদী করে ১১ ফেব্রুয়ারি এ রিট দায়ের করা হয়।
হুমায়ন কবির পল্লব আরও জানান, করোনাকালীন লকডাউনের সময়ে সরকারি গাড়িচালকদের মাসিক ২৫০ ঘণ্টা করে ওভারটাইম দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্থপ্রদান বিষয়ে তদন্ত এবং সেই অর্থ পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদান এবং এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ার নিষ্ক্রিয়তা কেন আইন বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং বিবাদীদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এই তদন্ত সম্পন্ন করে হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান হুমায়ন কবির পল্লব।
আগামী ২৭ জুন এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।