রাস্তায় কমেছে মানুষ
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে অন্য সময়ের তুলনায় রাজধানীর রাস্তা-ঘাট এখন বেশ ফাঁকা। মানুষের চলাচল কমে এসেছে। ফলে গণপরিবহনও কমেছে। যতটা সম্ভব গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন অনেকেই। যাদের নিতান্তই সুযোগ কম তারা চড়ছেন গণপরিবহনে। এতে গণপরিবহনেরও আয় কমে এসেছে বলেও জানালেন কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক।
আজ সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর অন্তত ১৫ জন বাসচালক, বেশকিছু সাধারণ যাত্রী, ট্রাফিক পুলিশ ও ব্যক্তিগত গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) একটি দ্বিতল বাস নিয়ে আজ বিকেল ৪টায় রওনা দেন চালক সোহাগ হোসেন। রাজধানীর ফার্মগেট আসতে বাসটির সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা ১০ মিনিট। বাসটির নিচতলায় যাত্রী ছিলেন পাঁচজন আর উপরের তলায় মাত্র দুজন!
সন্ধ্যায় ফার্মগেটে চালক সোহাগ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গাজীপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে অন্তত সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু লেগেছে অনেক কম। একদিকে যাত্রী কম থাকায় ভাড়া উঠছে না। বাসটির ইজারাদার কাল থেকে বাসটি আর না চালাতে বলে দিয়েছেন। কারণ যাত্রী না থাকলে খরচসহ লাভ তোলা যাবে না।’
সোহাগ হোসেন আরো বলেন, ‘গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্টে আসার পর আর একেবারেই জ্যাম ছিল না। রাস্তায় মানুষও কম। দেখেন, এত বড় বাসে মাত্র পাঁচজন বসে আছে! গাজীপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অন্যদিন কম করে হলেও দুই হাজার ৫০০ টাকা হয় কিন্তু আজ মাত্র এক হাজার ৫০ টাকা ভাড়া কেটেছি।’
বিআরটিসির সেই বাসে থাকা যাত্রী ইমাম আলী বলেন, ‘গাজীপুর থেকে এসেছি দ্রুতই। ফার্মগেটে এসে দেখছি হালকা জ্যাম। একবারও বাস ভরা যাত্রী দেখিনি।’
ফার্মগেটের রাস্তায় থাকা তেজগাঁওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আলতাফ হোসেন বললেন, ‘বাস অনেক কমে এসেছে। যাত্রী নেই খুব একটা। বাসের ভেতরে দেখেন যাত্রী নেই। যাত্রী না থাকায় কাল থেকে আরো বাস কমে আসবে। যাত্রীরা যতটা সম্ভব গণপরিবহন এড়িয়ে চলছেন।’
বিকেল সাড়ে ৩টায় রওনা দিয়ে কারওয়ান বাজার থেকে একটি ব্যক্তিগত মাইক্রোতে করে মাত্র ১৪ মিনিটে গাবতলী গিয়ে পৌঁছান আবদুল মালেক। তিনি বলেন, ‘মাত্র ১৪ মিনিটে অন্যদিন গাবতলী পৌঁছানো যাবে এটা ভাবা মুশকিল। আজ রাস্তা খুবই ফাঁকা।’
যাত্রাবাড়ী থেকে বিকেল ৩টার সময় বাসচালক আরিফ হোসেন ৮ নম্বর বাস নিয়ে রওনা দেন গাবতলীর পথে। এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর তিনি পৌঁছে যান গাবতলী। জানতে চাইলে গাবতলীতে থাকা আরিফ বলেন, ‘এই সময় অন্যদিন যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী পর্যন্ত আসতে সময় লাগে কম হলেও আড়াই ঘণ্টা। বেশিও লাগে। মাঝেমধ্যে দুই ঘণ্টায়ও আসি। কিন্তু এত দ্রুতই আসা যায় শুধু ভোরে আর ঈদের সময়। তবে যাত্রী কম। ইনকামও কম।’
সাভারের নবীনগর থেকে বৈশাখী পরিবহন নিয়ে বাড্ডা নতুন বাজার পর্যন্ত যেতে যেকোনো দিন অন্তত সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগে বলে জানাচ্ছিলেন বাসটির চালক উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বলেন, ‘অথচ আজ আড়াই ঘণ্টায় গিয়েছিলাম। পরের টিপ নিয়ে আবার যাচ্ছি।’
মিরপুর-১ থেকে কারওয়ানবাজারের উদ্দেশে তানজিল পরিবহনে উঠেছেন আবুল কালাম। ফার্মগেট পৌঁছে তিনি বলেন, ‘অন্য দিনের চেয়ে কম সময় লেগেছে আজ। রাস্তায় লোকজন কম। অনেকেই বের হচ্ছেন না। যেমন আমি আমার সন্তানদের বের হতে দিচ্ছি না। কয়েকদিন ধরে স্কুলেও যেতে দিচ্ছি না তাদের। যা হোক আমার হোক, বাচ্চারা ভালো থাকুক। যতটা সম্ভব গণপরিবহন এড়িয়ে চলা যায় ততই ভালো। কিন্তু আমার তো সেই সুযোগ নেই। বাইরে কাজ আছে। যেতেই হবে তাই যাচ্ছি। এদিকে মোটরসাইকেল বা সিএনজিতে ভাড়া অনেক।’
গাবতলীতে কয়েকটি উবারের গাড়ি দেখা যায়। সেখানে যাত্রীদের ভিড়ও ছিল। গাবতলী থেকে একটি ট্যাক্সি নিয়েছেন সুলতান হোসেন ও তাঁর পরিবার। পরিবারসহ যাবেন শাহাবাগ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক হাজার টাকা ভাড়া দেব তবুও বাসে উঠতে ইচ্ছে করেনি। ছেলেমেয়ে নিয়ে ভয়ে আছি। অথচ আমি সাধারণত বাসেই চড়ি। ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকি আগে টাকা আয় করা যাবে।’
ট্যাক্সিটির চালক শাহিন হোসেন বলেন, ‘অন্য সময়ের চেয়ে এখন একটু যাত্রীর চাপ বেশি। ভালোই আয় হচ্ছে।’