রামেক হাসপাতালে ছেলেসহ মুক্তিযোদ্ধাকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বিনা চিকিৎসা মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর মৃত্যু এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজশাহী জেলা ও মহানগর ইউনিট কমান্ড এ মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় স্ত্রীর মৃত্যু এবং মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর ছেলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন ইন্টার্ন নামের কিছু মাফিয়া চিকিৎসক। আমরা এ হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আর বিচার না হলে মুক্তিযোদ্ধারা শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। আগুন জ্বলবে পুরো রাজশাহীতে। তাঁরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানান।
মানববন্ধনের প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাজশাহী মহানগর শাখার সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান। সঞ্চালনা করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল।
মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধারা আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে মারধর করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, সেটি নিরপেক্ষ না। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সবাই চিকিৎসক। এ কারণে তাঁরা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের রক্ষা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। অচিরেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা না হলে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। যেসব ইন্টার্ন চিকিৎসক হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এটি না হলে আমরাই তাদের বিচার করব।
মুক্তিযোদ্ধারা আরো বলেন, ভালো চিকিৎসক হওয়ার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। কিন্তু চিকিৎসকরা সেবা দেন না। শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই নন, দেশের সাধারণ মানুষও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। কিছু চিকিৎসককে মনে হয় এরা মাফিয়া গ্যাংয়ের সদস্য। আর হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান মাফিয়া সর্দার। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁর সহযোগী।
রামেক হাসপাতালে বর্তমানে দুর্নীতি চরমে পৌঁছেছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এসব দুর্নীতিকে আড়াল করতেই হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেন না পরিচালক। আমরা অবিলম্বে হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাই। হাসপাতালের দুর্নীতি সাংবাদিকরা প্রকাশ করুন। জাতি জানতে চায়, চিকিৎসক নামধারী স্বাস্থ্য প্রশাসকরা দেশের অর্থ কীভাবে লুট করছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার শফিকুর রহমান রাজা, কবিকুঞ্জের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, রবিউল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, হাকিম আতাউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মোর্শেদ রঞ্জু, মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন মোল্লা, নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে মানববন্ধন থেকে ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, একই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল বেলা ১১টার দিকে নগরীর লক্ষ্মীপুরে মানববন্ধন করবে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ।
প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে নগরীর সাগরপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আসাহাক আলীর স্ত্রী পারুল বেগম (৬৫) বিনা চিকিৎসায় মারা যান। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ এনে মৃত পারুল বেগমের ছেলে রাকিবুল ইসলামকে আটক করে মারধর করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাঁকে বাঁচাতে গেলে মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলীকেও ব্যাপক মারধর করা হয়। পরে পারুল বেগমের লাশ জিম্মি করে তাঁর ছেলে রাকিবুলকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে রাজপাড়া থানায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা করে। তবে ওই দিন বিকেলে আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাকিবুল ইসলাম মুক্তি পেয়ে মায়ের দাফনের কাজে অংশ নেন।