রাতে ভোটকেন্দ্রে অন্তত ১৬ জনকে মোতায়েনের পরিকল্পনা ইসির

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব সদস্যকে ভোটের আগের দিবাগত রাতে ভোটকেন্দ্রে রাখার পরিকল্পনাও করছে ইসি।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২০-এর আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ইসি এই পরিকল্পনার কথা আলোচনা করবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সভায় জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশ, আনাসার, র্যাব ও বিজিবির মহাপরিচালক, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান এবং দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে ইসি। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। ওই বৈঠকে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই সিটি নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইসি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনাসহ মোট আটটি এজেন্ডা নিয়ে আজ বুধবার বিকেল ৩টার সময় বৈঠকে বসবে ইসি। সভার একটি পরিকল্পনাপত্র তৈরি করেছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। পরিকল্পনাপত্রে দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে ইসি প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে। আর ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করবে।
সভার পরিকল্পনাপত্র অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটের দুদিন আগে থেকে পরের দিন পর্যন্ত চার দিন এবং আনসার-ভিডিপি সদস্যরা পাঁচ দিন নিয়োজিত থাকবেন। ভোটের আগের রাতে কেন্দ্র-সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওই কেন্দ্রেই অবস্থান করতে হবে। প্রতিটি সিটি করপোরেশনে নির্ধারিত স্থানে পুলিশ ও র্যাবের প্রয়োজনীয় সংখ্যক টহল দল এবং তিন-চার প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স সংরক্ষিত রাখার জন্য বলা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের এজেন্ডাগুলোর মধ্যে রয়েছে—নির্বাচনপূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় স্থির করা, চিহ্নিত অপরাধী ও নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টকারী সম্ভাব্য দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনী কার্যক্রম গ্রহণ এবং নির্বাচনী দ্রব্যাদি পরিবহন ও সংরক্ষণে নিরাপত্তা বিধান, নির্বাচনী আইন এবং আচরণবিধিসহ বিভিন্ন নির্দেশনা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের পরিবেশ সুগম করা, নির্বাচনী এলাকায় ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ।
ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪টি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৩১৮টি, ভোটকক্ষ সাত হাজার ৮৪৬। অন্যদিকে দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র এক হাজার ১৫০টি এবং ভোটকক্ষ ছয় হাজার ৫৮৮টি। দুই সিটিতে ভোটকেন্দ্র দুই হাজার ৪৬৮টি।
দুই সিটির নিরাপত্তা পরিকল্পনায় দেখা গেছে, প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন সদস্য মোতায়েন করা হবে। সাধারণ কেন্দ্রে একজন উপপরিদর্শক (এসআই) অথবা সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) নেতৃত্বে চারজন পুলিশ সদস্য, অস্ত্রসহ আনসার দুজন ও ১০ জন অঙ্গীভূত আনসার মোতায়েন করা হবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশের সংখ্যা দুজন বেশি থাকবে। যদিও এখনো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র কতটি, তা নির্ধারণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আর ভোটকেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তা বিষয়ে পরিকল্পনাপত্রে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৫৪টি মোবাইল ও ১৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ৫৪টি টিম ও ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭৫টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৭৫টি মোবাইল ও ২৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ৭৫টি টিম ও ৩৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সংখ্যা কমবেশি করার কথাও বলা হয়েছে কার্যপত্রে। কার্যপত্রে নির্বাচন প্রচার নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসী এবং নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নির্বাচনী এলাকায় সন্দেহভাজন বা বহিরাগতদের অনুপ্রবেশকারী রোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে যেন হয়রানিমূলক ও বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে। ভোটের কয়েক দিন আগ থেকে বৈধ অস্ত্রধারীরাও যেন অস্ত্রসহ চলাচল না করেন, সে নির্দেশনাও দেওয়া হবে বৈঠকে।
ভোট গ্রহণ উপলক্ষে দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন। ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনী অপরাধে সংক্ষিপ্ত আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিচার করে সাজা দেবেন। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। তাঁরা আচরণবিধি প্রতিপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন। আর ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৭ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৩৭ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবেন। তাঁরা নির্বাচন বিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধি প্রতিপালন করবেন।