রাজশাহী কলেজে এইচএসসি ব্যাচের বর্ণাঢ্য পুনর্মিলনী
বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহী কলেজের এইচএসসি ব্যাচের দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
পুনর্মিলনী উপলক্ষে গতকাল সকালে কলেজ চত্বরে থেকে নগরীতে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। এতে আমন্ত্রিত অতিথি, কলেজের শিক্ষক এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। দেশে রাজশাহী কলেজেই প্রথমবারের মতো এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অ্যালামনাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষ হবে আজ শনিবার। দুদিনের এই আয়োজনে খরচ হচ্ছে দুই কোটি টাকারও বেশি। অংশ নিয়েছেন এইচএসসি ব্যাচের সাবেক নয় হাজার শিক্ষার্থী। থাকছেন এক হাজার অতিথিও। সাবেক শিক্ষার্থীরা বহুদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে এসে খুঁজে পেয়েছেন পুরোনো বন্ধুদের। গল্প-আড্ডায় মেতে উঠেছেন সবাই।
পুনর্মিলনী উপলক্ষে কলেজের সাজসজ্জাও চোখে পড়ার মতো। ৩৫ একরের পুরো ক্যাম্পাসের সবখানেই উৎসবের ছোঁয়া। কলেজের মাঠে প্রশাসন ভবনের আদলে তৈরি করা হয়েছে বিশালাকার এক মঞ্চ। প্রাক্তন শিক্ষার্থী কবি রজনীকান্ত সেনের নামে মঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রজনীকান্ত মঞ্চ’। দুদিন ধরে এ মঞ্চে থাকছে আলোচনা, স্মৃতিচারণা, ছাত্রাবাসের স্মৃতিচারণা, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, আতশবাজিসহ নানা আয়োজন। শুক্রবার রাতে এই মঞ্চ মাতান ব্যান্ড তারকা জেমস।
এর আগে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর অনেকটা সময় আমরা নষ্ট করেছি। সামরিক শাসন, স্বৈরশাসনের ভেতর আমাদের গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম করতে হয়েছে। এখন দেশে গণতন্ত্র রয়েছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষার মানের দিকে নজর দেওয়ার। আমরা আমাদের শতবর্ষী ১৩টি কলেজকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সরকারের পক্ষ থেকে তা করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য আমরা প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষার স্তর পর্যন্ত কাজ করব। সেই সঙ্গে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নও করব। শিক্ষার পরিবেশ হবে আনন্দময়। পড়াশোনার চাপে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে যেন আনন্দ হারিয়ে না যায়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
শিক্ষকদের গবেষণার ওপর জোর দিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষকরা গবেষণা কার্যক্রম আরো বেশি জোরদার করবেন। আমাদের দেশে গবেষণা হয়, কিন্তু ভাষার দুর্বলতার কারণে সেগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ হয় না, স্বীকৃতি আসে না। গবেষণার জন্য শুধু বরাদ্দ দিলেই হবে না, তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই ভাষাগত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডা. দীপু মনি এ সময় দেশসেরা রাজশাহী কলেজের প্রশংসা করেন। বলেন, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে এই কলেজে এসে মুগ্ধ হবেন না। ভাষার জন্য প্রথম আন্দোলন এখানে, প্রথম শহীদ মিনার এই কলেজেই। বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামে এই কলেজের অবদান অনস্বীকার্য।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই কলেজ বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া, ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার, কবি রজনীকান্ত সেন, চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক, ভারতীয় রাজনীতির পুরোধা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বিচারপতি হাবিবুর রহমানের কলেজ। সংসদে এই কলেজ থেকে পাস করা একজন মন্ত্রী আছেন, একজন হুইপ আছেন, আটজন সংসদ সদস্য আছেন। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এই কলেজের ছাত্র। ১৪৭ বছরের ইতিহাসে রাজশাহী কলেজ অসংখ্য গুণীজন তৈরি করেছে। দেশ-বিদেশে তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তাদের মতো আরো অনেক গুণীজন এই কলেজ থেকে তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে পরপর তিনবার দেশসেরা হয়েছে রাজশাহী কলেজ। কলেজের যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো দূর করা হবে। এখানে আরো একটা ছাত্রীনিবাস খুব প্রয়োজন। প্রশাসন ভবনেরও দরকার। অচিরেই এখানে ১০তলা ছাত্রীনিবাস হবে। প্রশাসন ভবনও করে দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন, নাটোর-৪ আসনের সাংসদ আবদুল কুদ্দুস, রাজশাহীর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ আদিবা আনজুম মিতা এবং সিনিয়র অ্যালামনাস ডা. এসএএ বারী। সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান।