রাজধানীতে ৪২ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) অভিযান পরিচালনা করে ৪২ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল শুক্রবার ডিএমপির বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবদুল বাতেন এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তথ্য জানান।
আবদুল বাতেন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী এবং অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কারণ, ছিনতাইকারীরা সুযোগ পেলেই ছিনতাইয়ের কাজটি করে। তাদের আইনের আওতায় এনে পূর্ণাঙ্গ সাজার ব্যবস্থা না করা হলে অপরাধ কমানো সম্ভব হবে না। বেশিরভাগ সময় বাস-লঞ্চ টার্মিনাল এবং অন্ধকার গলিতে ছিনতাই করে থাকে এরা। আর সেটা গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে।’
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা মহানগর এলাকার রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট আছে সেগুলো বেশিরভাগ নষ্ট এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। এতে ওসব এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। যেসব এলাকায় এমন অবস্থা আমাদের দায়িত্বশীলদের নজর দেওয়া দরকার। সাধারণ মানুষকেও সেসব এলাকা দিয়ে চলাচলের সময় সতকর্তা অবলম্বন করে চলতে হবে।’
আবদুল বাতেন বলেন, ‘ছিনতাই করার পর এসব মোবাইল ফোন কোথায় যায় এটা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি ছোটখাটো যে পার্টসের দোকান আছে তারা এসব চোরাই মোবাইল ফোনসেট কিনে থাকে। বসুন্ধরা, মোতালেব প্লাজার অনেক দোকানদার আছে, যারা এসব চোরাই মোবাইল কিনে থাকেন। এসব মোবাইল ফোন সরাসরি মানুষের কাছে বিক্রি করে না। বিশেষ করে নষ্ট হওয়া মোবাইল ফোনের পার্টস। এসব পার্টস বিক্রি করলে যে লাভ হয় তা মোবাইল বিক্রি করলেও হয় না।’
চোরাই মোবাইল কেনা দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হবে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রি ও কেনার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের আমরা চিহিৃত করেছি। অচিরেই সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হবে। বড় বড় মার্কেটের যেসব ব্যবসায়ীরা এসব মোবাইল বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে বলতে চাই এটা অপরাধ। এসব কাজে অবশ্যই তারা (ব্যবসায়ী) সতর্ক হন। আমাদের এই অভিযান চলবে। অভিযানের ফলে ছিনতাইকারী বা টানা পাটি আছে তাদের আধিপত্য হ্রাস পাবে।’
মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাই বেশি হয়, এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘ওই সময়গুলোতে এ
ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটে তা বন্ধ করতে আমরা বাস-লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে প্রোটোকল জোরদার করব। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হবে। বিশেষ করে ওই সব এলাকায় চিহ্নিত যেসব ছিনতাইকারী আছে খুঁজে খুঁজে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৭৪টি ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন, একটি ট্যাব ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩টি ছুরি ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। আগের ছিনতাই মামলা, সেসবের আলামত তদন্তে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
শনিবার ভোরে কমলাপুরে ব্যাগ ছিনতাই করতে গিয়ে তারিনা বেগম নামের এক নারীর মৃত্যুর বিষয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। এই ব্যাপারে মামলা হবে। আর অবশ্যই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে তাদেরকে নিরুসাহিত করা হয় এর কারণ কী? পুলিশের কোনো দায় আছে কি না- এমন প্রশ্নে বাতেন বলেন, ‘দায় বললে হবে না, এটা দায়িত্বশীলতা। নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব কোথাও কোনো অপরাধ হলে তাহলে অবশ্যই থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে হবে। তা ছাড়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব হয় না অপরাধ সম্পর্কে জানা কিংবা অপরাধীকে শনাক্ত করা। নগরবাসীকে বলতে চাই, আপনারা থানায় যাবেন অভিযোগ দেবেন। থানা যদি মামলা বা অভিযোগ নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে আমাদের ঊর্ধ্বতনদের জানাবেন। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে রিমান্ডে এনে কী জানতে চাওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে আমরা তা তদন্ত করছি। তার বিরুদ্ধে
অভিযোগের সত্যতা এবং ক্রিমিনাল অপরাধ সেগুলো চিহিৃত করছি। তদন্ত শেষে তা আমরা আপনাদের জানাব।’