যে কারণে আজ থেকে বন্ধ হচ্ছে করোনার বুলেটিন
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণে পুরো বিশ্ব তখন আতঙ্কগ্রস্ত। ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে প্রাণ কাড়ছিল এক দেশ থেকে অন্য দেশে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানুষকে করোনাবিষয়ক সচেতনতা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি আয়োজন করে করোনাবিষয়ক স্বাস্থ্য ব্রিফিংয়ের। প্রথম দিনের ব্রিফিং শুরু হয় চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি।
ঠিক এক মাস পর, অর্থাৎ গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী পাওয়ার কথা জানায় আইইডিসিআর। ওই দিনের পর থেকে লোকজন নিয়মিত বিকেল ৩টার দিকে টেলিভিশনের সামনে বসে প্রেস ব্রিফিং শুনে আসছে।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে আসতেন আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা। মাঝেমধ্যে এতে যুক্ত হতেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। ১৯ মার্চ খবর আসে, অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা অসুস্থ। এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা থেকে ২৩ মার্চ ব্রিফিংটি অনলাইনে জুম সফটওয়্যারের মাধ্যমে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারপর থেকে কখনো-সখনো ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হলে আর নিয়মিত অংশগ্রহণ করেননি সেব্রিনা ফ্লোরা।
মার্চের শেষের দিকে অধ্যাপক ফ্লোরার পরিবর্তে নিয়মিত ব্রিফিং পরিচালনা করতে থাকেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান। অনলাইন ব্রিফিংয়ে সে সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু সাংবাদিকদের নানামুখী প্রশ্নের মুখে বিব্রত হয়ে ৮ এপ্রিল থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তার পর থেকে ‘ব্রিফিং’কে ‘বুলেটিন’ আকারে উপস্থাপন করতে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সময় থেকে স্বাস্থ্য বুলেটিনে নিয়মিতভাবে তথ্য উপস্থাপন করতেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। প্রতিদিন দুপুর আড়াইটায় বুলেটিনে কথা বলতেন তিনি।
এদিকে ব্রিফিং শুরুর ছয় মাস চার দিনের মাথায়, অর্থাৎ আজ ১২ আগস্ট বুধবার থেকে আর হচ্ছে না বুলেটিনটি। গত সোমবার রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বুধবার থেকে দুপুর আড়াইটার নিয়মিত বুলেটিন আর হবে না।’
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বুলেটিনে অংশ নেন। তিনি সেখানে ঘোষণা দেন লাইভ স্বাস্থ্য বুলেটিন বন্ধের। সেই ঘোষণা অনুযায়ী আজ বুধবার থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করোনা-সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হবে গণমাধ্যমকে। তবে করোনা-সংক্রান্ত নানা তথ্য নিয়মিত গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে এখনো দেশে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি সংখ্যক মানুষের করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। এমন সময়ে হঠাৎ কেন বুলেটিন বন্ধ করা হচ্ছে? এ প্রশ্নে দুই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বিরতিহীনভাবে চার মাস ধরে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য বুলেটিনে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিদিন মৃত্যুর সংবাদ দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত। উনি আর পারছেন না। প্রেশারের ওষুধ খাচ্ছেন নিয়মিত। তাই বুলেটিনে অংশ না নিতে তিনি আমাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।’
খুরশীদ আলম বলেন, ‘নাসিমা সুলতানার ওই চিঠির কথা আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম। পরে মন্ত্রণালয় লাইভ বুলেটিন সাময়িক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব সময়ের নির্দেশনা ছিল, সিনিয়র কর্মকর্তাকে দিয়ে যেন স্বাস্থ্য বুলেটিন পরিচালনা করানো হয়। সে হিসেবে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ডা. সানিয়া তাহমিনা ঝোরাকে দিয়ে বুলেটিন চালানোর পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু তিনি এখন আইসোলেশনে আছেন। তাই নাসিমা সুলতানার জন্য মানবিক কারণে এই বুলেটিন বন্ধ করা হয়েছে। আগামীতে যদি আবারও করোনার প্রকোপ বাড়ে, তখন পুনরায় স্বাস্থ্য বুলেটিন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এসব ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি একটি চিঠি দিয়েছি, সেটা ঠিক। কিন্তু আমি কোথাও আমার অসুস্থতার কথা বলিনি। আমি চিঠিতে বলেছি, মানুষ নিয়মিত মৃত্যুর খবর নিতে নিতে ক্লান্ত। অনেককে বাজে মন্তব্য করতেও শোনা যায়। সে জন্য আমি বলেছি, লাইভ বুলেটিন না করে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এই করোনা-সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা যায় কিনা। এবং এ বিষয়টি কিন্তু আরো আগে থেকে আলোচনায় ছিল।’