যেভাবে দাফন করা হলো করোনায় মারা যাওয়া বৃদ্ধের লাশ
ঠিক বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে নেওয়া হয় ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের লাশ। তিনি আজ বুধবার সকালে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। লাশবাহী গাড়ির ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো লাশটি কবরস্থানে ঢোকার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিলেন কবরস্থানের চারজন ‘গোরখোদক’।
কবরস্থানের ভেতরে লাশবাহী গাড়িটি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সোজা চলে যায় দাফনের জন্য কবর খুঁড়ে রাখা নির্ধারিত স্থানে। আল মার্কাজুল ইসলামী নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের লাশবাহী গাড়িতে লাশটি নেওয়া হয় কবরস্থানে। গাড়িতে ছিলেন মার্কাজুলের চারজন ব্যক্তি। ওই চারজনই লাশটি গাড়ি থেকে স্ট্রেচারে করে নামান। এরপর চারজন গোরখোদক যান কবরের পাশে। তখন আটজনে মিলে লাশটির জানাজায় অংশ নেন।
আগে থেকেই কবরটি খোড়া ছিল। এরপর বিকেল ৫টা ১৪ মিনিটে স্ট্রেচার থেকে লাশটি কবরে নামান মার্কাজুলের ওই চারজন। কবরে লাশটি শায়িত করে তারা কিছু অংশ মাটি ফেলেন লাশটির ওপর। এরপর ওই চার গোরখোদক বাঁশ আর মাটি দিয়ে পুরো কবরটি ঢেকে দেন। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট।
লাশটি যখন কবর দেওয়া হচ্ছিল তখন কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি সেখানে যায়। তারা পাশ থেকে দেখছিল দাফন করার প্রক্রিয়া। এ ছাড়া নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখছিল কবরস্থান সংশ্লিষ্টরা। সেখানে দুজন গণমাধ্যমকর্মীও ছিলেন। লাশ দাফন করে ফেরার সময় মার্কাজুল ইসলামীর কর্মীরা গণমাধ্যমকর্মীসহ সেখানে থাকা কয়েকজনকে ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি ছিটিয়ে দেন শরীরে। এরপর কবরস্থান সংশ্লিষ্টরা পুনরায় ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি ছিটিয়ে দেন।
লাশটি যখন মাটি চাপা দিচ্ছিলেন গোরখোদকরা তখন মার্কাজুল ইসলামীর ওই চারজনের একজন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা দুপুরের দিকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যাই লাশটি আনতে। গিয়ে শুনতে পেলাম, লাশের সঙ্গে বৃদ্ধের ছেলে ছিলেন। কিন্তু তিনি লাশ রেখে পালিয়েছেন। তাঁকে আর আমরা খুঁজে পাইনি। মৃতের ছেলের জন্য আমরা এক ঘণ্টা হাসপাতালে অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু তাঁকে আর পাইনি। ছেলের ফোন নম্বরে কল দিয়েছিলাম কিন্তু তিনি ধরেননি। পরে আমরা লাশ নিয়ে কবরস্থানে চলে এসেছি।’
আল মার্কাজুল ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. হামজা ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে আমাদের হট লাইনে যোগাযোগ করে। পরে আমরা লাশ নিয়ে আসি। লাশের সঙ্গে কাউকে পাইনি। শুনেছি ছেলে ছিল কিন্তু সে পালিয়েছে। তারপর আমরা লাশ দাফন করতে নিয়ে এলাম। এখন পর্যন্ত এই কবরস্থানে আমরা চারটি লাশ দাফন করেছি।’
আপনাদের কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি আছে কি না, জানতে চাইলে মো. হামজা ইসলাম বলেন, ‘যারা লাশ স্পর্শ করেন তাদের জন্য পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) আছে। এ ছাড়া ক্যামিকেল স্প্রের ব্যবস্থা আছে। তা ছাড়া আইইডিসিআর লাশটি এমনভাবে প্যাকেজিং করে যেখান থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর আর কোনো সুযোগ থাকে না।’
তালতলা কবরস্থানে কবর খোড়া থেকে দাফন করা পর্যন্ত সব কিছু দেখভাল করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ স্রেফ কবর খুড়ে দেওয়া। যদিও আমরা লাশ দাফনে সহযোগিতা করি।’
লাশ দাফনের সময় ঝুঁকি আছে কি না, জানতে চাইলে তাজিনা সারোয়ার বলেন, ‘আইইডিসিআর থেকে আমাদের বলা হয়েছে লাশ প্যাকেজিং করার পর আর সেখান থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর সুযোগ থাকে না। তারা সেভাবেই প্যাকেজিং করে দেন যাতে আর ঝুঁকি না থাকে।’