যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির আসামি রজব আলী গ্রেপ্তার
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে (৬৯) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। কিন্তু, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। সবশেষ গতকাল শনিবার তাঁকে রাজধানীর কলাবাগান থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছিলেন রজব আলী। কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় নিরীহ মানুষ হত্যায় জড়িত তিনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন রজব আলী।
রজব আলী ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তানি ইসলামি ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তার জন্য গঠন করেন ‘আলবদর’ বাহিনী। তখন তিনি এই বাহিনীর কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বলেও জানান খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমিনুল হকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। এর এক বছর পর ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর দাখিল কর হয় তদন্ত প্রতিবেদন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৮ মে ট্রাইব্যুনাল রজব আলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর রজব আলীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় রজব আলী পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চন্ডিপুর গ্রাম এবং কিশোরগঞ্জ জেলার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট, লুণ্ঠন ও নির্যাতন করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন রজব আলী। ১৯৭২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে তিনটি মামলা হয়। মামলাগুলোতে ৪০ বছরের সাজা হয়। কিন্তু, রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ১৯৮১ সালে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার আমিনুল ১৯৮২ সালে জেল থেকে বের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে যান। ১৯৯৭ সালে তিনি চলে আসেন ঢাকায়। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
গ্রেপ্তার রজব আলী ‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ নামে দুটি বই প্রকাশ করেছিলেন। যেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এরপর সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা হয়।