যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া থেকে ফিরেছেন ১৪৮ বাংলাদেশি
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম তাদের ভলান্টারি হিউম্যানিটেরিয়ান রিটার্ন (ভিএইচআর) কর্মসূচির মাধ্যমে লিবিয়া থেকে ১৪৮ জন বাংলাদেশিকে নিরাপদে দেশে ফিরতে সাহায্য করেছে। অভিবাসীদের ফিরেয়ে আনতে একটি বিশেষ ভাড়া করা বিমানের ব্যবস্থা করে আইওএম।
গতকাল মঙ্গলবার লিবিয়ার মিসারত বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়ে আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় বিমানটি। ফিরে আসাদের মধ্যে যুদ্ধে আহত, সমুদ্র পথে ইউরোপ যেতে ব্যর্থ এবং লিবিয়ার জেলে বন্দি থাকা অভিবাসীরা আছেন।
ফিরে আসা অভিবাসীরা মনসামাজিক সেবা, তৎক্ষণিক সেবা, ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযেগে করতে সহয়তা পেয়েছে।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে আইওএম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাড়ি ফিরতে প্রত্যেকে চার হাজার ৭৩০ টাকা, খাবার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মানসিক সেবা পেয়েছেন। আগামীতে এই অভিবাসীদের অর্থনৈতিক সহযোগিতাও করবে আইওএম। যাতে তারা বাংলাদেশে আয় করে জীবন চালাতে পারেন।
আইওএমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুপুরের মো. আকবর চার বছর আগে লিবিয়ায়ি গিয়েছিলেন পারিবারের ভাগ্য বদলাতে। তিনি বলছিলেন, গ্রামের দালাল ধরে লিবিয়ায় গিয়েছিলেন। বেতন ছিল খুবই কম। কোনোমতে নিজে চলতে পারতেন। যে কারখনায় আকবর কাজ করতেন হঠাৎ বিমান হামলা হয় সেখানে। চার বাংলাদেশিসহ ১৩ জন মারা যান।
আকবর বলছিলেন, ‘সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। মনে হলো অল্পের জন্য জীবনটা বাঁচল। সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে আসব।’
এরপর লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস হয়ে আইওএমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আকবর। স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আজ বুধবার ১৪৮ জনের সঙ্গে তিনিও দেশে ফেরেন।
আকবর বলেন, ‘এ এক বিরাট উপকার। কারণ আইওএমের উদ্যোগের কারণে জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছি।’
প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে আটজন শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি আছেন। অসুস্থ ব্যক্তিদের নিবিড়ভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির জন্য সহায়তা করা হয়েছে।
আইওএম বাংলাদেশের চিফ অব মিশন গিওর্গি গিগাওরি বলেন, ‘লিবিয়ার প্রতিকূল অবস্থা অব্যাহত থাকায় ঝুকিপূর্ণ বাংলাদেশিদের সুরক্ষা ও সহায়তা দিতে সর্বদা আমরা তৎপর। যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে তাদের তাৎক্ষণিক সব ধরনেরর সহযোগিতা নিশ্চিত করছি আমরা। একই সঙ্গে ফিরে আসা অভিবাসীদের দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতাও করব আমরা।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে, বাংলদেশ সরকার ও লিবিয়া কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার চারশর বেশি বাংলাদেশিকে দেশে ফিরতে সহযোগিতা করেছে আই্ওএম। বিশ্বব্যাপী ভিএইচআর প্রোগ্রামটির সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও সহায়তা দিয়ে থাকে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।