যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) ও যুগ্মসচিব সৈয়দ মো. নূরুল বাসির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কমিটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে জমা দিয়েছে। পরে সেখান থেকে রিপোর্ট সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যাবে।
সৈয়দ নূরুল বাসির বলেন, তাঁরা মূলত বিভাগীয় তদন্ত করেছেন। ঘটনার সময় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা কী ভূমিকা নিয়েছিলেন তাও কমিটি খতিয়ে দেখেছে। ঘটনার গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বুঝতে কেন্দ্রে কর্মরত সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার সবাই তাদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে থাকা পুলিশই বিষয়টি পুলিশকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ সুপার ঘটনা জানার পরপরই খুব দ্রুত সক্রিয় হয়েছেন। কিন্তু দুপুরের ঘটনা তিনিও জেনেছেন কয়েক ঘণ্টা পর। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কেন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলো, পুলিশেরই উচিত এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা।
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই তারা যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের পুরো টোটাল সেটআপকে পুরোপুরি পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছেন রিপোর্টে।
এদিকে এ ঘটনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত শেষ করতে আরো সাতদিন সময় পেয়েছে। তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের পাঁচ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ কমিটির পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা এখনও না পাওয়ায় তদন্ত কমিটি তাদের তদন্তকাজ শেষ করার জন্য বুধবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। আজ মন্ত্রণালয় থেকে এ তদন্ত কমিটির মেয়াদ আরো সাতদিন বাড়ানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এ কমিটির প্রধান যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছ। এর আগে এ কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।
গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্মম পিটুনিতে তিন কিশোর নিহত হয়। আহত হয় ১৫ জন। প্রথম দিকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শিশু-কিশোরদের দুই পক্ষের মারামারি বলে প্রচার করে। কিন্তু পরে তদন্তে উঠে আসতে থাকে কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের নির্দেশে পিটুনিতেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় নিহত হয় খুলনার দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল সুজন (১৮) ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)। এ ব্যাপারে নিহত রাব্বির বাবা রোকা মিয়া বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ওই পাঁচ কর্মকর্তাকেই সমাজসেবা অধিদপ্তর সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
এদিকে, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদ গ্রেপ্তার ও সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় ওই পদে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলনার সহকারী পরিচালক জাকির হোসেনকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যেই তিনি সেখানে যোগদান করেছেন বলে যশোর সমাজসেবা কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।