ময়মনসিংহে কম সম্মানীভাতা পাওয়ার অভিযোগ হাম-রুবেলা টিকাকর্মীদের
চার মাস পার হয়ে গেলেও ময়মনসিংহে হামরু-বেলা টিকা কার্যক্রমে জড়িতরা তাদের পুরো সম্মানী ভাতা পাননি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাম-রুবেলা টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য পরিদর্শক, টিকাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানী ভাতা নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও করেছেন তাঁরা।
টিকা কার্যক্রমে জড়িতদের অনেকেই বলেছেন, কাউকে আংশিক টাকা দিয়ে সই নিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, পরে দেওয়া হবে। ঈদের আগে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করা হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সরকারি ও বিদেশি দাতাদের অর্থে পরিচালিত হয়েছে টিকা কার্যক্রম। উপজেলা পর্যায়ে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। কেউ না পেয়ে থাকলে তা আমাদের জানা নেই।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং টিকা কার্যক্রমে জড়িতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ২৪ কর্মদিবসের জন্য জেলার সব উপজেলায় এই টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর মধ্যে গৌরীপুর উপজেলায় ৭২টি সেন্টার মিলিয়ে ১০টি ইউনিয়নে ৭২০টি অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র করা হয়েছিল। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, দুজন টিকাকর্মী ও দুজন স্বেচ্ছাসেবকসহ পাঁচজনের টিম টিকা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু টিকা কার্যক্রমে জড়িতেরা অভিযোগ করেছেন, গৌরীপুর উপজেলায় কোনো স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং টিকা কার্যক্রমে জড়িতেরা জানান, গৌরীপুরে ১০টি ইউনিয়ন। প্রতি ইউনিয়নে তিনজন করে মোট ৩০ জন প্রথম সারির স্বাস্থ্য পরিদর্শক কাজ করেছেন। একদিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শককে সবমিলিয়ে পাঁচ হাজার ৭২০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও আড়াই হাজার টাকা দিয়ে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে। টিকাকর্মীদেরও একইভাবে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দুই হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে সই নেওয়া হয়েছে। চার মাস পার হয়ে গেলেও তারা আজও বাকি টাকা পাননি।
গৌরীপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রথম সারির স্বাস্থ্য পরিদর্শক ছিলেন ৩০ জন। তাঁদের জন্য বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৬০০ টাকা। গৌরীপুরসহ জেলার একাধিক স্বাস্থ্য পরিদর্শক বলেছেন, জনপ্রতি আড়াই হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা বলে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে।
৬০ জন টিকাকর্মীর জন্য জনপ্রতি ১৮০ টাকা হারে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৫৯ হাজার ২০০ টাকা। তাঁদের কাউকে দুই হাজার টাকা, আবার কাউকে আরও কম দিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীর মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
জেলার নেতৃস্থানীয় একাধিক টিকাকর্মী বলেছেন, ঈদের একদিন আগে তাঁদের তিন হাজার ৬০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ টিকাকর্মী আজও টাকা পাননি।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেছেন, বিষয়টি অফিসিয়াল। এ রকম বিষয় জানতে চাওয়া ঠিক নয়। কেউ অভিযোগ করে থাকলে তাঁকে আশ্বস্ত করে টাকা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, এ বিষয়ে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। ইউনিসেফ, গাভি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারি অর্থে টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ধাপে ধাপে উপজেলা পর্যায়ে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। প্রাপ্যরা চার মাসেও কেন সম্মানী ভাতার টাকা পাননি, তা আমার জানা নেই।