মৌলভীবাজারের চা বাগানে যেভাবে ৪ খুন
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাল্লারতল চা বাগানে স্ত্রী, শাশুড়ি ও দুই প্রতিবেশীকে হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নির্মল কর্মকার নামে এক ব্যক্তি।
সীমান্তবর্তী পাহাড়ি নির্জন এলাকায় এই প্রথম নির্মম লোমহর্ষক এই ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। শোকে মুহ্যমান পাল্লারতল চা বাগানের শ্রমিক, কর্মচারী ও এলাকাবাসী।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বিজিপি, পুলিশ, র্যাব, পিবিআই ও সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
যেভাবে ঘটনা ঘটল
পাল্লারতল চা বাগানের টিলায় পাশাপাশি দুটি ঘরে বসবাস করতেন চা শ্রমিক নির্মল কর্মকার (৩৮) ও প্রতিবেশী বসন্ত ভক্তা (৫২)। আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নির্মল ও তাঁর স্ত্রী জলি বুনার্জির (৩৪) মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে জলিকে মারধর করতে থাকলে জলি দৌড়ে প্রতিবেশী বসন্তের ঘরের সামনে গিয়ে চিৎকার করেন।
এ সময় নির্মল ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী ও শাশুড়ি লক্ষ্মী বুনার্জিকে (৪৮) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকেন। চিৎকার শুনে বসন্ত ঘর থেকে বের হয়ে ঝগড়া থামাতে চাইলে তাঁকে ও তাঁর মেয়ে শিউলি ভক্তাকে (১১) কোপাতে থাকেন নির্মল।
এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। ওই চারজনের মৃত্যু হলে নির্মল বসন্তের ঘরে গিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়।
এ ঘটনায় বসন্তের স্ত্রী শুরুতর আহত হয়ে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ বলেন, ‘খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে অধিকতর তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
স্থানীয়রা জানান, নির্মল ও জলি দুজনেরই এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। বছরখানেক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের নিজেদের কোনো সন্তান ছিল না। চন্দ্রনা ছিল জলির আগের স্বামীর সন্তান। জলির বাবা বিষ্ণু বুনার্জি দীর্ঘদিন থেকে নিজ বাড়িতে না থেকে তাঁর আরেক মেয়ের বাড়িতে থাকেন। বিষ্ণু বুনার্জির দুই মেয়ের মধ্যে জলি বুনার্জি তাঁর স্বামী নির্মল কর্মকার, মা লক্ষ্মী বুনার্জি ও চন্দ্রনাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন।
সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিলেট জোন) অপূর্ব সাহা বলেন, ‘আমরা আলামত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছি, যাতে পরবর্তী সময়ে তদন্তে কাজে আসে। ঘটনাস্থল কর্ডন করে রেখেছে সিআইডি পুলিশ।’
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি পারিবারিক কলহের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নির্মল হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি এলাকার লোকদের সঙ্গে কথাবার্তা কম বলতেন। নির্মল অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত ও মাদকাসক্ত ছিলেন। তবে ঘটনার সঙ্গে অন্যকিছু আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।’
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর চা বাগানসহ জেলাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।