মোংলায় বিনামূল্যের ঘর পেলেন তৃতীয় লিঙ্গের নিশি
নিশি আক্তার (২৪)। তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ। বাবা নেই, মাকে নিয়ে থাকতেন সরকারি জায়গায় চায়ের দোকানে। মা চা বিক্রি করেন। আর তিনি এদিক সেদিক করে কোনো রকম জীবন চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল নিজ জমি-ঘরে বসবাসের। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
আজ রোববার মোংলার নারকেলতলা আবাসন প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বিনামূল্যের ঘর পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের নিশি আক্তার। ঘর পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে ধন্যবাদ দিতে ভুলেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
দেশের অন্য কোথাও এমন ঘটনা হয়েছে কিনা, তা জানা না গেলেও বাগেরহাট জেলায় এই প্রথম কোনো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে জমি ও ঘর দিয়ে সহায়তা করা হলো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘মোংলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিতে অনেক গৃহ ও ভূমিহীনরা আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আবেদন পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিশি আক্তারকে ঘর দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে এর আগে তিনি আসলে ঘর পাওয়ার যোগ্য কি না সেটিও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।’
এদিকে রোববার সরেজমিনে নিশির নতুন ঘরে গিয়ে দেখা যায় তাঁর মা সুফিয়া বেগমকে (৬০) নিয়ে সেখানে উঠেছেন তিনি। নতুন ঘর পেয়ে দারুণ খুশি তারা।
নিশি বলেন, ‘আমাদের থাকার জায়গা ছিল না। স্থায়ী থাকার জায়গা হলো এখন। আমাদের মতো মানুষকে মূল্যায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিন বছর আগে মারা যান নিশির বাবা ইমান শেখ। এরপর তাঁর পাঁচ ভাই যে যার মতো আলাদা হয়ে যান। শুধু মায়ের সঙ্গে ছিলেন নিশি। পৌর শহরের কুমারখালীর টি এ ফারুক স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ হয়। তখন তাঁর নাম ছিল জাবেদ শেখ। এরপর স্থানীয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে পরিণত হয়ে যান নিশি আক্তার রূপে।
এদিকে মোংলায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়েছে ৫০টি ভূমিহীন পরিবার। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। উপকারভোগীদের হাতে এসব ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার ও ইউএনও কমলেশ মজুমদার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।