মেয়াদোত্তীর্ণ ৩৪ কোটি টাকার ওষুধ ধ্বংস, জরিমানা
গত দুই মাসে ৩৪ কোটি সাত লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। একই সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল, ভেজাল ওষুধ বিক্রয়ে গৃহীত কার্যক্রম’ শীর্ষক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদন আজ মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে ১৩ হাজার ৫৯৩টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টে ৫৭২টি মামলা করা হয়। এতে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল, ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে দুটি ফার্মেসি সিলগালা করা হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে ৩৪ কোটি সাত লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ টাকার টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১২ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘অভিযানের সঙ্গে আমরা একমত। নকল ওষুধ যেন বাজারে না থাকে, এটা আমরাও চাই। একটা আবেদন ছিল, ওষুধের গায়ে যেন বাংলায় লেখা থাকে। আমরা প্যাকেট খুলে দেখিয়েছি, বাংলায় লেখা আছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ইংরেজিতে লেখা। উনারা স্ট্রিপে (পাতায়) চেয়েছেন বাংলা লেখা। স্ট্রিপে ইংরেজিতে লেখা আছে। খুব একটা ভিজিবল হয় না, ফরম্যাটের কারণে। আমরা বলেছি, ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে বসব। বসে যতটুকু সম্ভব, অলরেডি অনেকগুলো বাংলায় হয়ে গেছে। তবে শতভাগ যেন হয়। আমাদের বিদেশেও ওষুধ পাঠাতে হয়। তাই সবকিছু ঠিক করে একটি প্রতিবেদন দেব।’
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘এরই মধ্যে যাদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে, তারা আবার যদি একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্টে মামলা দায়েরের জন্য ওনারা (আদালত) আজকে মৌখিকভাবে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যার সাজা যাবজ্জীবন, এমনিক মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। ফলে যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। যেন আপনারা এ ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ করবেন না, বিক্রি করবেন না এবং ভেজাল ওষুধ বিক্রির চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে সরকার আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আইনগত দায়িত্ব পালন করবে।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অনেক সময় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি তাদের রিপ্রেজেন্টেটিভ দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, সেটা বন্ধ করার জন্য আদালত ওষুধ শিল্প মালিকদের আইনজীবীদের বলেছেন যেন এ ধরনের কোনো অনিয়ম বা অন্যায় না হয়। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরে আদেশ নিয়ে আসতে পারেন।
‘১২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিবেদন দেবে ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধের কার্যক্রম নিয়ে। আদালত ঔষধ প্রশাসনসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে বলেছেন যেন বাংলাদেশের বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি না হয়। ওষুধ শিল্প সমিতিকে বলেছেন, ইংরেজির পাশাপাশি যেন বাংলার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও মূল্য লেখা থাকে, সেটা বিবেচনা করতে,’ যোগ করেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট এক আদেশে সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার/ ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন দেন।
গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১৭ জুন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন রিট করেন।