মেয়রের আশ্বাসে রায়হানের মায়ের অনশন প্রত্যাহার
আমরণ অনশনে বসা রায়হান আহমদের মায়ের অনশন ভাঙিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশেনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আজ রোববার সন্ধ্যার আগে রায়হানের মা সালমা বেগমকে শরবত খাইয়ে অনশন ভাঙান মেয়র।
এ সময় মেয়র আরিফ রায়হানের মাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘রায়হানের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। তারপরও অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার না হলে সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমিও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’
মেয়রের আশ্বাসে অনশন থেকে উঠলেও এ সময় রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, ‘আমি আর আশ্বাস শুনতে চাই না। এখন উদ্যোগ দেখতে চাই। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার চাই।’
এর আগে আজ সকালে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রায়হানের মা সালমা বেগমসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা অনশন শুরু করেন। অনশনে সংহতি জানিয়ে অনেকেই অংশ নেন। বিকেলে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে সড়ক অবরোধ করে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
রায়হান হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ অন্য অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলেও সেসময় জানিয়েছিলেন সালমা বেগম।
এ সময় আশপাশের বাসিন্দারাও তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনে অংশ নেন। অনশনকারীদের হাতে ছিল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ফেস্টুন। এ ছাড়া মাথায় সাদা কাপড় পরে অনশনে অংশ নেন রায়হানের পরিবারের সদস্যরা।
গত ১১ অক্টোবর রায়হানকে হত্যার পর থেকেই পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে টানা বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন মা সালমা বেগম। তাতেও কাজ না হওয়ায় আজ অনশন শুরু করেন তিনি।
মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশীদকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। আজ টিটু চন্দ্র দাশকে আরো তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
গত ১১ অক্টোবর ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের অভিযোগে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরের দিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এ মামলায় ২০ অক্টোবর পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও ২৪ অক্টোবর কনস্টেবল হারুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পিবিআই।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনমুখড় হয়ে পড়ে সিলেট। সিলেট মহানগর পুলিশকে নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই সমালোচনার মুখে গত ২২ অক্টোবর মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়। আর এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভূঁইয়া ১২ অক্টোবর থেকে পলাতক রয়েছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে ১০ অক্টোবর দিবাগত রাত ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দর বাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।