মি. বেকারের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ, ব্যাংক হিসাব তলব
মি. বেকারের টঙ্গী ও গাজীপুরের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। অধিকতর তদন্তের জন্য মি. বেকারের ব্যাংক লেনদেনের হিসাব তলব করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে ঢাকা ব্যাংক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ সংক্রান্ত নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।
রাজধানীতে পেস্ট্রি শপের ২৯টি ও সুইটমিটের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তাদের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানায় কারখানাও রয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভ্যাট গোয়েন্দাদের দুটি পৃথক দল গত মঙ্গলবার টঙ্গী ও গাজীপুরে মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড ও মি. বেকার সুইটসের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠান দুটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত।
অভিযান দুটিতে নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থার উপপরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার এবং ফেরদৌসি মাহবুব ও তানভীর আহমেদ।
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এর আগে গত ১৮ অক্টোবর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান ফেসবুকে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত মি. বেকারের বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ‘ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। ওই কেন্দ্রটিতে ভ্যাট কর্তন করে একটা কাঁচা চালান দিয়ে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
এই অভিযোগ এবং আরো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরের চেয়ারম্যান অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠান দুটিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটি হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদি দেখাতে বলা হলে, মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেননি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তাঁরা কোনো সদুত্তরও দিতে পারেননি। ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানের আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখেন না।
এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, নিজস্ব মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে মি. বেকার স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। একইসঙ্গে তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেননি।
অভিযানের একপর্যায়ে গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরোনো কিছু অসংগঠিত তথ্যাদি পায়। গোয়েন্দা দল এসব কাগজপত্র জব্দ করে।
গোয়েন্দা দলের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এমনকি অভিযানের আগের দিন যেসব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬.৫ চালান দেখতে চাইলেও তাঁরা দেখাতে পারেননি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬.৫-এর মাধ্যমে পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে আউটলেটে নেওয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না।
পাশাপাশি, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের আরেকটি দল উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপের বিক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে। কর্মকর্তারা প্রথমে পরিচয় গোপন করে পণ্য ক্রয় করে দেখতে পান যে, এই বিক্রয়কেন্দ্রটি মূসক চালান (মূসক-৬.৩) ছাড়া পণ্য বিক্রি করছে। এখানে তাঁরা অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবের অভিযোগের সত্যতা পান। একইসঙ্গে গোয়েন্দা দল গতকাল বুধবার বেইলি রোডে অবস্থিত মি. বেকারের দুটি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পণ্য ক্রয় করেও দেখতে পান যে, তারা মূসক চালান ছাড়া পণ্য সরবরাহ করছে।
এতে প্রমাণিত হয়, ভ্যাট আইন অনুযায়ী রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ না করে এবং ভ্যাট আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটি ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট চালান ছাড়া পণ্য সরবরাহ ও বিক্রয় করায় মি. বেকারকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে।
অভিযানে জব্দ করা দলিলাদি ও ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত দলিলাদির ভিত্তিতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় ও অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
একইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযুক্ত মি. বেকারের যাবতীয় উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রয় সরাসরি তত্ত্বাবধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।