মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মানতে হবে : তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অবশ্যই মানতে হবে। তাদের এই রায় প্রত্যাখ্যান করার কোনো সুযোগ নাই। এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। সেখানে যতজন বিচারক ছিল তারা সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়েছেন।’
আজ শনিবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাঝে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ ও ক্যান্সার রোগীদের অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছে মিয়ানমারকে চার মাস পর আদালতকে ওই রায়ের কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে তার রিপোর্ট করতে।’ তিনি বলেন, ‘যেসব দেশগুলো এই রায়ের আগে মিয়ানমার যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করেছে, এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্টিকে নির্মূল করেছে সেই ব্যাপারে এত দিন দ্বিধায় ছিল আমি মনে করি এই রায়ের পর তারা মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করবে। এতদিন যারা মিয়ানমারকে এই কাজ থেকে নিবৃত্ত করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ করেনি, তারা রোহিঙ্গাদের যাতে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিয়ে যায় সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই রায়ের পর মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করবে। মিয়ানমারকে এই রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মিয়ানমারে যখন সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছে, যখন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, রোহিঙ্গাদের যখন নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি, তাহলে মায়ানমারের ১০-১১ লাখ মানুষকেও খাওয়াতে পারব। সেই কারণে তিনি আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছেন এবং তাদের বাংলাদেশে জায়গা করে দিয়েছেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, কিন্তু মিয়ানমার যেভাবে সেখানে মানুষ হত্যা করেছে, ছোট শিশুদের হত্যা করেছে, সন্তানের সামনে মাকে ধর্ষণ করেছে। নির্বিচারে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে, সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। সেই অপরাধের বিরুদ্ধে ওআইসির সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে) মামলা করেছে। সেই মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক রায় হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সেই মামলায় আন্তর্জাতিক আদালত অন্তবর্তীকালীন আদেশে বলেছে মিয়ানমারকে অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধ করতে হবে। সেখানে যে আরো রোহিঙ্গারা রয়েছে তাদের যাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়, এবং এর আগে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। মিয়ানমরের সেনাবাহিনীসহ অন্য যেসব বাহিনী অপরাধ সংঘটিত করেছে তারা যাতে আর কোনোভাবেই এ ধরনের কাজে যুক্ত না থাকে। এবং তারা যাতে কোনোভাবে অন্য কাউকে আর প্ররোচনা না দেয় সেজন্য এই ঐতিহাসিক রায় দেওয়া হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি হিসেবে প্রাথমিকে ১০১ জন শিক্ষার্থীকে এক হাজার ২০০ টাকা করে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ৯৪ জন শিক্ষার্থীকে এক হাজার ৫০০ টাকা করে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ৯ জন শিক্ষার্থীকে তিন হাজার ২০০ টাকা এবং ডিগ্রি ও অনার্স পর্যায়ে দুজন শিক্ষার্থীকে চার হাজার ৫০০ টাকা করে দেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সামগ্রী এবং ৩০ জনকে বাইসাইকেল দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২১ জন ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস ও জন্মগত হৃদরোগীকে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ইউএনও মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ খলিলুর রহমান চৌধুরী, পৌরসভার মেয়র আলহাজ শাহজাহান সিকদার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার প্রমুখ।