মিরপুরে বিএনপির মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা, রিজভী আহত
রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে আজ শনিবার সকালে বিএনপির মিছিলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে মিছিলের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সহসভাপতি ওমর ফারুক কাউসার, ঢাকা কলেজ শাখার সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম তুহিনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন।
বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কারাবন্দি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আজ সকাল ১০টার দিকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারের সামনে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলের আগে বক্তব্য দেন রুহুল কবির রিজভী। বক্তব্যের পর পরই মিছিল শুরু হলে পুলিশ অতর্কিতে মিছিলে লাঠিপেটা শুরু করে। এতে মিছিলে নেতৃত্বদানকারী বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। লাঠিপেটার পর মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
মিছিলে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পুলিশের এই হামলা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এক নগ্ন উদাহরণ। পুলিশের এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশের পুলিশ এখন দলীয় কর্মীতে পরিণত হয়েছে। দেশকে বানানো হয়েছে পুলিশী রাষ্ট্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করেই বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গায়ের জোরে জনগণের শোষকে পরিণত হয়েছে।’ তিনি পুলিশী হামলায় আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন এবং এ ধরনের হামলায় মনোবল না হারিয়ে আরো শক্তি নিয়ে প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, হামলা মামলা দিয়ে বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমানো যাবে না। দেশের মানুষ বর্তমান অবৈধ সরকারের নিপীড়নে অতিষ্ঠ। যেকোনো সময় জনবিস্ফোরণ ঘটবে। সেসময় ক্ষমতাসীন অবৈধ আওয়ামী সরকার ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। ইনশা আল্লাহ জনগণের আন্দোলনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন। আর তখন দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। দেশের মানুষ মুক্তি ও নিরাপত্তা পাবে ইনশা আল্লাহ।
এর আগে মিছিলপূর্ব এক পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে ভয়ানক অসুস্থ। তাঁর ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরুপে অনিয়ন্ত্রিত। খালি পেটেই ১৫ থেকে ২০ এর মধ্যে ডায়াবেটিস উঠানামা করছে। তিনি কিছুই খেতে পারছেন না, দাঁড়াতে পারছেন না। এই অবস্থায় তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসা করা না গেলে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, দেশনেত্রীর মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিয়ে দল এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের দাবিকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না সরকার। দেশবাসী মনে করে যে, খালেদা জিয়াকে তিল তিল করে নিঃশেষ করতেই বর্তমান সরকার ও সরকারপ্রধান উঠেপড়ে লেগেছেন। দেশবাসী আরো মনে করে যে, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। তাঁর মুক্তি ব্যতিরেকে মানুষের ভোটের অধিকারসহ সব গণতান্ত্রিক অধিকার কবরস্থ হয়েই থাকবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছে অন্যায়ভাবে সাজানো মামলায়। বেআইনি শাসকগোষ্ঠী ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে কেবল তাদের ব্যর্থতা, অনাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যাতে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস না পায়। জনগণের দরকার নেই বরং জনগণকে ভয় দেখিয়ে চিরকাল রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখার জন্যই গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা তথা রক্তপাতের মাধ্যমেই দেশশাসন করা হচ্ছে। মহাদুর্নীতি ও অবাধে লুটপাট কার্যকর রাখার জন্যই একদলীয় নব্য বাকশালী শাসন কায়েম করা হয়েছে। প্রতিনিয়তই দেশব্যাপী শুধু হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ধ্বনিত প্রতিধ্বণিত হচ্ছে। জাতিকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে এবং হারানো গণতন্ত্র ফিরে পেতে ‘গণতন্ত্রের মা’ গণমানুষের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির বিকল্প নেই। আমি আবারও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।”