মিন্নিকেই দায়ী করছে আসামিদের পরিবার
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ছয় আসামির মধ্যে রয়েছে রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩) ও আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১)। আজ বুধবার দুপুরে এ রায় ঘোষণার আগেই তাঁদের দুজনের মায়ের সঙ্গে এনটিভি অনলাইনের কথা হয়। দুজনের মা-ই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ী করেছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে।
আসামি রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর মা বলেন, ‘একটা মেয়ের (মিন্নি) জন্য আজ ২৪টি পরিবার ধ্বংস, দুটি ছেলের জীবন চলে গেছে। আমরা এর ন্যায়বিচার চাই।’
এদিকে, রাব্বি আকনের আসামি হওয়ার ক্ষেত্রে রাব্বির মাও দায়ী করেছেন মিন্নিকে। তিনি বলেছেন, ‘এ ঘটনার মূল হোতা রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি।’
রিফাত ও রিশান ফরাজীর মা বলছিলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আমার ছেলেদের ফাঁসানো হয়েছে। তাদের কোনো দোষ নেই। তাদের দোষ, তারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভায়রার ছেলে। এটা তাদের বড় অপরাধ, যেন তারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভায়রার ছেলে হিসেবে জন্ম নিয়েছে।’
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীকে দেখা গেছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের মা বলেন, ‘প্রযুক্তির যুগে এসব এডিট করা যায়। আদালতে প্রমাণ হয় যে, পাঁচটি কোপই নয়নবন্ড দিয়েছে।’ আসামিদের মেসেঞ্জারে গ্রুপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগের দিন আমার ছেলের আইডি হ্যাক হয়। এ জন্য তাকে ওই গ্রুপে দেখা গেছে।’
অন্যদিকে রাব্বি আকনের মা বলেন, ‘আমার ছেলে সরকারি কর্মকর্তা হতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ সে খুনের আসামি হয়ে গেল। আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।’
রাব্বি আকনের মা আরো বলেন, “আমি তো আমার ছেলেকে এভাবে দেখতে চাইনি। আমার ছেলে ঢাকা কলেজে পড়ালেখা করত। সে সব সময় বলত, ‘মা, তোমাকে সবাই বলবে পুলিশ অফিসারের মা।’ কিন্তু আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমার ছেলের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।”
‘আমার স্বামী গার্মেন্টসে ছোট একটি কাজ করেন। এই মামলা চালাতে গিয়ে আমরা সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি,’ যোগ করেন রাব্বির মা।
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান আজ দুপুরে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ছয় আসামিকে ফাঁসি ও চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন—রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।
মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন—মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)। আসামিদের মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। আর মো. মুসা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক।
গত বছরের ২৬ জুন প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। মামলার ২৪ আসামির মধ্যে আজ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার প্রধান আসামি মো. সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়নবন্ড গত বছরের ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
অন্যদিকে, গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। অপ্রাপ্তবয়স্ক আট আসামি উচ্চ আদালত ও বরগুনার শিশু আদালতের আদেশে জামিনে রয়েছে।