মায়ের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন মেজর জেনারেল জয়নুল
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। এর আগে আজ বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে করে চুনতি পৌঁছাবে তাঁর লাশ। আসরের নামাজ শেষে ১৩ একরবিশিষ্ট চুনতির ঐতিহাসিক সীরত ময়দানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে তাঁকে। জয়নুল আবেদীনের ফুফাতো ভাই চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ার কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এরই মধ্যে গতকাল বুধবার বিকেলে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হেলিপ্যাড তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মায়ের কবরের পাশ ঘেঁষেই খনন করা হয়েছে কবর।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ার কামাল জানান, ১৯৭৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান জয়নুল আবেদীনের মা মেহেরুন্নেছা। পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে। এর পরের বছরই ১৯৮০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মারা যান তাঁর বাবা ইসহাক মিয়া। তিনি চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁকেও পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পশ্চিম পাশে দাফন করা হয়। আর আজ মায়ের কবরের পাশ ঘেঁষেই খনন করা হচ্ছে জয়নুল আবেদীনের কবর। লোহাগাড়ার সার্বিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে ভূমিকা রাখা এ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া বিরাজ করেছে লোহাগাড়াজুড়ে।
গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। গতকাল বুধবার তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয়। আজ সকাল ১০টায় ঢাকা সেনানিবাসে জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে করে লাশ লোহাগাড়ায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি মুন্সেফ বাজারের পশ্চিম পাশে সিকদারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল আবেদীন। তাঁর বাবা ইসহাক মিয়া ও মা মেহেরুন্নেছা। ছাত্রজীবনে চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসায় পড়ালেখার হাতেখড়ি। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে এসএসসি ও ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। দুই বছর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৯৫-৯৬ সালে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর সাহসী নেতৃত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার কারণে অনেক জটিল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হয়। দেশের প্রতি নির্ভয় আত্মত্যাগ, মানসিক দৃঢ়তার জন্য তাঁকে মর্যাদাপূর্ণ ‘বীর বিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
একজন চৌকস সেনা কর্মকর্তা হিসেবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করেন জয়নুল আবেদীন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও কর্মদক্ষতার কারণে শান্তিরক্ষী মিশন থেকে ফিরে আসার পর তাঁকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। এপ্রিল মাসে মেজর জেনারেল পদে তিনি পদোন্নতি লাভ করেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে তিনি দায়িত্বরত ছিলেন।