মামলা তুলে নিতে সেই যুবলীগ নেতাকে হুমকি, বাসায় হামলা
রাঙামাটিতে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা নাসিরের বাসায় গতকাল শনিবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন নাসির।
অভিযোগে নাসির জানিয়েছেন, গতকাল রাতে মুখোশপরা একদল সন্ত্রাসী তাঁর বাসার দরজা ভেঙে ঢোকে পড়ে। এরপর তাঁর গলাটিপে ধরে দুদিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য বলে। তা না করলে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ সময় তিনি চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। তখন মুখোশধারীরা পালিয়ে যায়।
লিখিত অভিযোগে নাসির আরো জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের মুখ বাধা থাকলেও তাঁদের কথাবার্তায় তিনি বুঝেছেন, এদের মধ্যে জেলা যুবলীগের সহসম্পাদক মো. মিজান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন ও পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহাব ছিলেন। হামলাকারীরা তাঁর বাসায়ও ভাঙচুর করেছে।
আজ রোববার নাসির এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ওপর হত্যাচেষ্টা মামলার আট আসামির মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হলেও বাকি আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমি বারবার বিষয়টি আমাদের দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি। কিন্তু তার পরও আবার আমার বাসায় হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনার পর পরিবার নিয়ে আতংকে আছি। আমি সরকারের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাই।’
নাসির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি এখন নিজগৃহেও নিরাপদ নই। আমাকে আসামিরা গভীর রাতে প্রাণনাশের হুমকি এবং দুদিনের মধ্যে মামলা তুলে না নিলে আমার ছেলেকে অপহরণ করবে বলে হুমকি দেয়।’
নাসিরের অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আগের হত্যাচেষ্টা মামলার এক আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। আদালত তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। বাকি আসামিদেরও আমরা গ্রেপ্তার করতাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দলীয় বিবাদ হওয়ায় বিষয়টি তারা সমাধান করবেন, তাই আমরা একটু ধীরেচলো নীতিতে এগুচ্ছিলাম, তাদের পদক্ষেপ দেখার জন্য। এই অবস্থায় আবার নাসিরের বাসায় হামলার ঘটনায় আমরাও বিব্রত। ওসি সাহেবও ছুটিতে, তিনি আজকেই আসবেন। তিনি আসার পর আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেব।’
নাসির হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘মামলাটি রাজনৈতিক পর্যায়ে মীমাংসা হবে বলে জেনেছি। ফলে একজন আসামি গ্রেপ্তার করার পর আমরা একটু ধীরগতিতে এগুচ্ছি। আমাকে যে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হবে সেভাবেই কাজ করব।’
এদিকে নাসিরের বাসায় গিয়ে তাঁকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন। তিনি বলেছেন, ‘আমি গতকাল বিকেলেই পারিবারিক কারণে চট্টগ্রাম এসেছি। এই ঘটনার সঙ্গে আমার জড়িত থাকার ন্যূনতম কোনো কারণ নেই। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দলে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদীরা আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য আমাকে বিতর্কিত করতে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমি এসব নোংরা মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ করছি। সেইসঙ্গে নাসিরের ওপর হামলা ও হুমকি যাঁরা দিয়েছেন তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আরেক সন্দেহভাজন জেলা যুবলীগের সহসম্পাদক মো. মিজান বলেন, ‘আমি শনিবার রাতে বাসাই ছিলাম। নাসিরের বাসা কোথায় সেটাও আমি জানি না। আমি কেন তাঁকে হুমকি দিতে যাব? রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে।’
এদিকে, যুবলীগ নেতা নাসিরকে হত্যাচেষ্টা ও তাঁর পরের ঘটনাবলীর জেরে এইসব সমস্যা সমাধানে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহসভাপতি হাজি কামাল ও যুগ্ম সম্পাদক হাজি মতিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দুবার বৈঠকে বসে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন। এর মধ্যেই গত রাতে আবার হামলার ঘটনা ঘটল।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেছেন, ‘আমরা তাদের উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে যখন সমস্যাটির সুরাহা করার চেষ্টা করছি, সেই সময় আবার এ ঘটনা ঘটল। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, কী ঘটেছে সেখানে সেটা জানার চেষ্টা করছি। আমরা আজকেই আবার বসব। দেখি কী করা যায়।’
গত ২৭ জানুয়ারি রাঙামাটি শহরের প্রত্যাশা ক্লাবে ডেকে নিয়ে যুবলীগ নেতা নাসিরকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে কয়েকজন ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মী। এতে নাসিরের পায়ের রগ কেটে যায়। নাসিরকে গুরুতর আহত অবস্থায় হামলাকারীরাই রাঙামাটি সদর হাসপাতালের সামনে ফেলে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসকরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠান। সেখানেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন নাসির।
হামলার ঘটনার তিন দিন পর নানান টালাবাহানা শেষে ৩০ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় নাসিরের স্ত্রী সালেহা আক্তার একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করতে সক্ষম হন। মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজনসহ আট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
মামলা করার ১২ দিনেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ৯ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন আহত নাসিরের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা। হামলার ঘটনার ১৩ দিন পর ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আসামি মীর শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে রাঙামাটি শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।